দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ঠিকাদার জি কে শামীমের ১৮০টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৩৩৭ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত রয়েছে বলে জানা গেছে।
বুধবার মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় জি কে শামীমসহ তার অস্ত্রধারী সাত দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।
মামলার অপর আসামিরা হলেন-জি কে শামীমের দেহরক্ষী মুরাদ হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, শহিদুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, কামাল হোসেন, আমিনুল ইসলাম এবং মো. সামসাদ হোসেন।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে জি কে শামীমের ১৮০টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৩৩৭ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় তার দুটি বাড়িসহ প্রায় ৫২ কাঠা জমি ররয়েছে। এসবের দাম ৪১ কোটি টাকা।
আলোচিত ঠিকাদার জি কে শামীম তার অস্ত্রধারী সাত দেহরক্ষীকে দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টেন্ডারবাজি, বাস টার্মিনাল ও গরুর হাটে চাঁদাবাজি করে অপরাধলব্ধ এসব সম্পদ-অর্থ অর্জন করেছেন বলেও চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
চার্জশিটে বলা হয়, এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশের ১৮০টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৬ হাজার ৫৮ কোটি ৪৯ লাখ ৫১ হাজার ৮৪২ টাকা লেনদেন করে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালের মধ্যে বেশির ভাগ লেনদেন হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জি কে শামীমের স্থায়ী আমানত ৩৩৬ কোটি ৩০ লাখ ৫১ হাজার ৪০৬ টাকার ওপর আদালতের আদেশে স্থিতি রয়েছে।
গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ১ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ৯ হাজার মার্কিন ডলার ও ৭৫২ সিঙ্গাপুরি মুদ্রা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় দুটি বাড়িসহ তার ৫১ দশমিক ৮৩ কাঠা স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছে। এর দলিলমূল্য ৪০ কোটি ৯৯ লাখ ৮০ হাজার ২০০ টাকা।
চার্জশিটের তথ্য উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি একক ও যৌথ নামে ১৫৪টি প্রকল্পের কাজ পায়। গ্রেপ্তারের আগে ৬১টি প্রকল্প শেষ করে ৭৪৩ কোটি ৭৭ লাখ ৩৬ হাজার ৮৪৩ টাকা বুঝে নেন। ৪ হাজার ৮১০ কোটি ৪৯ লাখ ৪৩ হাজার ২৬২ টাকার বাকি ৯৩ প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি।
তার সাত দেহরক্ষীর বিষয়ে চার্জশিটে বলা হয়, জি কে শামীমের দেহরক্ষী হিসেবে কর্তব্যরত থেকে আসামিরা প্রকাশ্যে অস্ত্র ব্যবহার করে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে, পরস্পর যোগসাজশে সংঘবদ্ধ অপরাধ করার মাধ্যমে টেন্ডারবাজিতে সহায়তা এবং বিভিন্ন টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে নিয়ে রয়্যালটি ফি গ্রহণ করতো।
জি কে শামীম তার দেহরক্ষীদের দিয়ে জুয়ার ব্যবসাসহ স্থানীয় বাস টার্মিনাল ও গরুর হাটে চাঁদাবাজি করতো। তারা অপরাধলব্ধ আয় অবৈধভাবে বিদেশে পাচারের জন্য মজুত করে বিদেশে মানি লন্ডারিংয়ের চেষ্টা করেছে।
ক্যাসিনোকাণ্ডে অভিযানের শুরুর পর গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর র্যাব গুলশানের নিকেতনের বাসা ও কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে জি কে শামীমকে গ্রেপ্তার করে। ওই সময় তার সঙ্গে থাকা সাত দেহরক্ষীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করে র্যাব। এর আগে র্যাব অস্ত্র ও মাদকের মামলায় অভিযোগপত্র দেয়। মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্য সাত দেহরক্ষী কারাগারে রয়েছে। তবে জি কে শামীম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
সিআইডির অর্গানাইজড ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াডের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আবু সাঈদ জানান, বুধবার জি কে শামীমসহ সাত দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আয় করা অর্থ শামীম বিদেশে পাচার করার চেষ্টা করছিলেন বলে তিনি জানান।
2021-01-30 06:29:31
0000-00-00 00:00:00