হেফাজতের ১৩ দফার মধ্যে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করার দাবি

আন্দোলন দমনের কৌশল কিংবা যে কারণেই হোক হেফাজতের ১৩ দফা মেনে নেয়ার কথা বলা হয়েছিল তখন। সেসবের মধ্যে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করার দাবি অন্যতম। এবং এ দাবির প্রতিফলন হিসেবেই উচ্চ আদালতের প্রাঙ্গণ থেকে ন্যায়বিচারের গ্রীক ভাস্কর্য প্রত্যাহার করা হয়েছে।

হেফাজতের দাবিতে নীতিগত সমর্থন দিয়ে কথিত নাস্তিক, মুরতাদ বা ধর্ম-ব্যবসার সমালোচনাকারীদের শাস্তি বিধানের অংশ হিসেবে অজস্র মানুষকে কারাবন্দি করা হয়েছে। এমনকি এই চক্রটা অসন্তুষ্ট হতে পারে বিধায় এই ইস্যুতে রেকর্ড সংখ্যক লেখক ও ব্লগার নিধন হওয়া সত্ত্বেও হত্যাকারীদের বিচারের বাইরে রাখা হয়েছে। একইভাবে, দফাভুক্ত আবদারের অংশ হিসেবেই যেকোন অন্যায় ও অস্বাভাবিক দাবিদাওয়া নিয়ে মিছিল মিটিং সমাবেশ করেও তারা বিন্দুমাত্র আঘাত আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থেকেছে, বলা চলে বিগত এক দশকে রাজপথে কেবল এদের ক্ষেত্রেই আন্দোলনের অধিকার বহাল রাখা হয়েছে।

শিশুদের পাঠ্যবই থেকে অমুসলিম লেখকের রচনা বাতিল করার মতো ঘটনা ঘটানো হয়েছে এদের আবদারের সাথে আপোষ করে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে হেফাজতের দাবি মানা হয়েছে, হচ্ছে মর্মে ঘোষণা দিয়ে বলা হয়েছে যে দাবিগুলো তারা করেছেন তার অনেকগুলোই কিন্তু ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিছু দাবি বাস্তবায়নের পথে যেগুলোর যৌক্তিকতা রয়েছে।

এরপরই আমরা দেখেছি ১৩ দফাভুক্ত বাকিসব দাবিদাওয়ার যৌক্তিকতা জাহির করতে সরকারি দলের শরিক সংগঠন ওলামা লীগ সারাদেশে মিটিং মানববন্ধন করেছে, দাবিদাওয়ার প্রেক্ষিতে যাদেরকে এমনকি হেফাজতের চাইতেও কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। নাস্তিক মুরতাদ বা ধর্মের সমালোচনাকারীদের মৃত্যুদণ্ড প্রদান, পাঠ্যপুস্তক থেকে অমুসলিম ও বামপন্থী লেখকদের রচনা বাতিল, মূর্তি ও ভাস্কর্য অপসারণ ইত্যাদি ইস্যুতে হেফাজতের সাথে একসুরে কথা বলার পাশাপাশি সরকারপুষ্ট এই চক্রটি ক্রিকেটসহ খেলাধুলা বন্ধের দাবি করেছে, বাল্যবিবাহ চালু করা এবং এর বিরুদ্ধে কথা বলাদের শাস্তি দাবি করেছে, বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখ নিষিদ্ধ দাবিও করেছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, হেফাজতের এমত যেকোন দাবিদাওয়া বা আবদারের সমান্তরালেই ওলামা লীগকে মাঠে নামতে, এবং হেফাজত গংদের চাইতেও তাদের গোঁড়ামি কতখানি গূঢ় তা প্রমাণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা প্রদর্শন করতে দেখা গেছে। অতএব, এই যে হিমালয়সম নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভাস্কর্য ভেঙ্গেচুরে খালে ফেলে দেয়া হয়েছে, সারাদেশ থেকে সমস্ত ভাস্কর্য গুড়িয়ে দেয়ার হুংকার প্রদান করা হয়েছে- এসবের পরিপ্রেক্ষিতে, বা এদের চাইতেও কয়েকধাপ অগ্রগামী প্রমাণ করতে ওলামা লীগ এখন কোন দাবি নিয়ে রাস্তায় নামবে এটাই এখন এদেশের জনগণ দেখতে চেয়ে উন্মুখ হয়ে আছে!

আজিজুল হক
বাংলাদেশ

2021-03-15 22:32:42

2021-03-15 11:32:42

Published
Categorized as 54

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *