হিন্দু বসতি গড়ে কাশ্মীরের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ চেহারা পাল্টাতে চায় ভারত

কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী ও রক্ষণশীল গ্রুপ আরএসএসের সমর্থনপুষ্ট হয়ে ২০১৬ সালে প্রথম ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন নরেন্দ্র মোদি। আরএসএসকে একই সাথে ক্ষমতাসীন বিজেপি দলের মেরুদণ্ড হিসেবেও মনে করা হয়।

সমালোচকরা এটাও মনে করেন যে, ভারতের স্বাধীনতার প্রতীক ও অহিংসবাদী নেতা মহাত্মা গান্ধীকেও মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল আরএসএস, কারণ নাথুরাম গডসে ছিল আরএসএসের সদস্য। তাছাড়া মোদির সরকারের বিরুদ্ধে এখন নব্য ফ্যাসিবাদ ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেয়ার অভিযোগও উঠেছে।

ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র এবং বিশাল একটি দেশ। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এ দেশটি বিপজ্জনক পতনের দিকে চলেছে। গরুর মাংস খাওয়া এবং গরু জবাই করার কারণে সংখ্যালঘুদের এখানে হত্যা করা হয়েছে এবং ভারতের উগ্র জাতীয়বাদী নরেন্দ্র বা তার দল কখনও এগুলো নিয়ে কথাই বলেনি।

সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি

ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে যে, ২০০০ এর বেশি কুলাঙ্গার আর চরমপন্থী আরএসএস সদস্য গুজরাটে মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছিল। নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযোগ করা হয় যে, গুজরাটের ওই গণহত্যায় জড়িতদের মদদ দিয়েছিলেন তিনি।

ফ্যাসিবাদী মোদি ক্ষমতা গ্রহণের সাথে সাথেই ক্ষমতা, যুক্তি, বিবেক, ভারতের সেক্যুলার নীতি – সব কিছুর পতন শুরু হয়েছে। সমালোচকদের দমন করে, সংখ্যালঘুদের দমন করে এবং সমালোচকদের দেশের শত্রু আখ্যা দিয়ে মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার সারা বিশ্বের সামনে একটা ফ্যাসিবাদী আদর্শের লাগাম খুলে দিয়েছে। মোদির সরকার ভারতের উপর তাদের নিজস্ব ভার্সনের ফ্যাসিবাদী শাসন শুরু করেছে।

ভারতে মুসলিম-বিরোধী দাঙ্গাগুলো প্রমাণ করে যে, তথাকথিত এই সেক্যুলার দেশে সংখ্যালঘুদেরকে কিভাবে নির্যাতন চালানো হয় আর তাদেরকে কিভাবে উগ্র জনতা হত্যা করে। ভারতের উগ্র জাতীয়তাবাদী জনতা অসহিংস সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হামলার ক্ষেত্রে মানবিকতার সমস্ত মাত্রা লঙ্ঘন করেছে। এই জনতার ভোট নির্বাচনে দরকার বলে নরেন্দ্র মোদি তাদের কিছুই বলেননি।

মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেও এই অমানবিক তৎপরতা বন্ধে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা খুবই আপত্তিকর একটি বিষয়। ভারতে কোন ঔদ্ধত্য নিয়ে প্রকাশ্যই মানুষের উপর হামলা করা হচ্ছে এবং আগুন লাগানো হচ্ছে, সেটা কল্পনা করাও কঠিন। আর এদের দায়মুক্তির বিষয়টিও সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে।

হিন্দু বসতি স্থাপনকারীদের দিয়ে মুসলিম সংখ্যাগুরু বৈশিষ্ট্য বদলে দেয়া

মোদির ভারতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মাত্রা বাড়ছে আর সরকার ফ্যাসিবাদ নিয়ে খেলছে। ভারত শাসিত কাশ্মীরে প্রতিদিনই মুসলিমরা রাজনৈতিক হিংসার শিকার হচ্ছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর ভারতের অন্যান্য জায়গার নাগরিকরা এখন কাশ্মীরে বসত গড়তে পারবে। কাশ্মীরী এবং ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের সমালোচকরা এই পদক্ষেপকে কাশ্মীরের জনমিতিক চেহারা বদলে দেয়ার ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন।

সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যতেই দেখা যাচ্ছে যে, মোদি সরকারের প্রথম পাঁচ মাসে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এমন একটা ধারণা এখন তৈরি হয়েছে যে একটা অসহিষ্ণু সরকার দেশ শাসন করছে, যারা সংখ্যালঘু ও উদারপন্থীদের ডাস্টবিনের কাছাকাছি ফেলে রাখতে চায়। ভারতের এই ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনের কারণে ইসলামিক চরমপন্থারও মাত্রা বাড়ছে।

চরম অসহিষ্ণুতার কারণে ভারতের ইমেজের যে বৈশ্বিক ক্ষতি হয়েছে, বিজেপি প্রশাসন যেন সে ব্যাপারে চরম উদাসীন। একদিকে অসহিষ্ণুতা, সাম্প্রদায়িতক ঘৃণা, এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে দিয়ে, অন্যদিকে বিশ্বের দরবারে একটা সুশিক্ষিত বহুত্ববাদ, সহিষ্ণুতা আর গান্ধীবাদের প্রতীক হিসেবে ভারতকে তুলে ধরাটা মোদির সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।

2021-05-04 19:32:42

0000-00-00 00:00:00

Published
Categorized as 18

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *