ড্রিষ্টিক দায়রা জজ মোজাম্মেল হক সাহেবের এক মাত্র কন্যা নায়লা হক দেশে ফিরেছেন বিয়ে করে নতুন জামাই সাথে নিয়ে।নায়লা বারেষ্টারি পড়া শেষ করে তার পছন্দের ছেলে কে বিয়ে করেছে।ছেলে এ্যামেরিকায় মুদির দোকান চালায়।
এমনিতেই মোজাম্মেল হক সাহেবের মাথা খুব গরম হয়ে আছে তার মেয়ের এমন কান্ড জ্ঞানহীন কর্ম দেখে।
তার ওপরে সকালে নাস্তার টেবিলে জামাই কে লুঙ্গি পরা অবস্থায় দেখে রাগে তার গা জ্বলে যাচ্ছে।
একদম ইচ্ছে করছে না উল্লুক টার সাথে কথা বলতে। কিন্তু মা মরা মেয়েটাকে কষ্ট দিতে একদম ইচ্ছে করছে না। মেয়েকে খুশি করার জন্য তিনি ঠিক করলেন, জামাইয়ের সাথে দু একটা কথা বলবেন।
তিনি পশ্ন করলেন, তোমার নাম কি?
এ বাসায় আসার পর কাল রাতে একবার নাম বলেছি।
আবার বলো।
এখন ইচ্ছে করছে না নাম বলতে।
প্রশ্ন করে উত্তর না পেলে আমার মেজাজ গরম হয়।যা জিজ্ঞেস করছি উত্তর দাও।
জাহিদ হাসান।
তোমার বাবার নাম কি?
সে কি করেন?
আমার বাবার নাম ড: হাসানুজ্জামান।
কাল তুমি বললে তোমার বাবার নাম জাহাঙ্গীর কবির।সে গ্রামে মুদি দোকান চালায়।
আজকে আবার মিথ্যে বলছো কেন?
জ্বী আমার বাবা জাহাঙ্গীর কবির।সে মুদি দোকানদার। দেখলাম আপনার মনে আছে কিনা।
মনে থাকার পরও একিই প্রশ্ন বার বার করে আমাকে বিরক্ত করছেন।।তাই মিথ্যে বলা।
নায়লা এতোক্ষণ মিটমিট করে হাসছিল, এবার হো হো করে হেসে দিল।
তিনি নায়লার দিকে তাকিয়ে বললেন,বদের বাচ্চার সাহসটা দেখেছিস। আমার সাথে ইয়ার্কি করে। দেখাচ্ছে তো এক দাড়িহীন ছাগলের মত।
এবার নায়লার হাসি বন্ধ হয়ে চোখ পানিতে ভিজে উঠলো।সে অভিমানী কন্ঠে বললো,বাবা জাহিদ কে তুমি এভাবে বলবে না। আমার খুব কষ্ট হয়।
মোজাম্মেল সাহেব নিজের ব্যাবহারে খুবই লজ্জিত হলেন।তার মা মরা মেয়ে টা এতো দিন পরে দেশে আসছে। এভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি।
তিনি মন খারাপ করে আধা খাওয়া প্লেটে হাত ধুয়ে উঠে গেলেন।
রাতে ভালো ঘুম হয়নি। কোর্টে ও মন বসছিল না,তাই তিনি আজ সকাল সকাল বাসায় চলে এসেছেন।
ঘরে ঢুকেই তার সামনে পরে গেল বোরখা পরিহিত মুখচোখ ঢাকা পাহাড়ের মতো এক মহিলা।
আপনি কে?
এখানে কি চাই?
বাবা তুমি এসেছো?
ওনি মিস রুবিনা। আমি ওনাকে ম্যাসেজ করানোর জন্য খবর দিয়ে এনেছি।
মিস রুবিনা আপনি এখন আসতে পারেন।
বাবা তোমাকে চা দেই?
মোজাম্মেল সাহেব মেয়ের মুখের দিকে তাকালেন।
অবাক হয়ে জানতে চাইলেন,ম্যাসেজ করানোর জন্য মানে?
কিসের ম্যাসেজ?
বাবা শরীর ম্যাসেজ।লং জার্নি করে এসে শরীর খুব ম্যাজম্যাজ করছে।
তাই মিস রুবিনা কে খবর দিয়ে আনলাম। এখন থেকে সপ্তাহে একদিন এসে ম্যাসেজ করে দিয়ে যাবে।
একজন বাইরের লোক এসে তোকে ন্যাংটো করে শরীর দলা মোচড়া করবে!
বাবা এটা কি ধরনের ভাষা ব্যাবহার করছো?
মিস রুবিনা ইংল্যান্ড থেকে পি এইচ ডি করা।
ও টেপাটেপির ওপরে আবার পি এইচ ডি!
তা কতো টাকা দিতে হবে ওনাকে?
বেশি না বাবা।
পার ডে পাঁচশ টাকা।
কিছুক্ষণ শরীর টেপাটেপি করে পাঁচশ টাকা নিয়ে যাবে!
তা তোর সঙ্গে যে গাধা থাকে তাকে দিয়ে টেপাটেপি করাতে পারিস না।
এটা ঠিক না বাবা।
সবসময় তুমি জাহিদ কে গাধা বলো।
বেচারা মন খারাপ করে।
গাধার সাথে থাকতে থাকতে আমার মেয়েটাও গাধি হয়ে গেছে। দুই জনকেই দশ হাজার টাকা সহ সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা দরকার।অনাদায়ে এক বছর কারাদণ্ড। মোজাম্মেল সাহেব বিড়বিড় করে বলতে বলতে দোতলায় উঠে গেলেন।
নায়লা চা আর কেক নিয়ে বাবার রুমে ঢুকলো।
বাবা তোমার জন্য চা এনেছি।
তিনি মুখ তুলে চেয়ে দেখলেন মেয়ের পেছন পেছন জামাই বাবাজিও আছে।
চা এনেছিস ভালো কথা। তোর পেছন পেছন এই গাধাটা সব সময় ঘুরঘুর করে কেন?
ওর কি কোন কাজ নেই।
নায়লার চোখ আবার ভিজে উঠতে শুরু করেছে।সে প্রাণপণ চেষ্টা করছে চোখের পানি লুকিয়ে স্বাভাবিক থাকতে।
বাবা তুমি সবসময় এতো রেগে থাকো কেন?
তোমার জামাই আমাকে ছাড়া এক মূহূর্ত ও থাকতে পারে না।তাই আমার পেছন পেছন ঘুরে।এতে এতো রাগ করার কি আছে বাবা।
বাবা শোন, আজ কিন্তু ক্যান্ডেল ডিনার হবে। আমি নিজে রান্না করছি। আমেরিকান রেসিপিতে পিৎজা..
নায়লার কথা শেষ হবার আগেই তিনি হুংকার ছাড়লেন।
তোর পিৎজা তোর গাধাকে নিয়ে একসাথে খা।
রহিমার মাকে বল আমার জন্য গরম ভাত আলুভাজা আর ডাল করতে।
খিদেয় পেট চু চু করছে।আসছে ক্যান্ডেল লাইট করতে।
রাতে ঘুমের মধ্যে মোজাম্মেল সাহেব শুনতে পেলেন কেউ যেন নাক টেনে টেনে কান্না করছে।
একবার মনে হলো তিনি স্বপ্ন দেখছেন। আবার মনে হচ্ছে তার সেই ছোট্ট নায়লা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ঘুমের মধ্যে তার বুকে কেমন যেন ব্যাথা করে উঠলো। সাথে সাথে ঘুম ভেঙে পানির পিপাসায় যেন বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে।
তিনি প্রতিদিন ঘুমানোর আগে তার সাইড টেবিলে একগ্লাস পানি ঢাকা দিয়ে রেখে যায় রহিমার মা ।
কিন্তু আজ নেই।
তিনি উঠে ডাইনিং এ আসলেন।পানি খেলেন। অন্ধকারে ও বুঝতে পারলেন নায়লা ব্যালকোনিতে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
তিনি গভীর মমতায় আচ্ছন্ন হয়ে গেলেন। তার মেয়েটার কি এতো দুঃখ,যে রাত দুপুরে কাঁদতে হবে!
তিনি আস্তে করে নায়লার পিঠে হাত রাখলেন।
কি হয়েছে মা?
ঘুম আসছে না?
রাত দুপুরে এভাবে ঠান্ডা বাতাসে বসে থাকলে শরীর খারাপ করবে তো।
নায়লা উঠে বাবাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিল।
কি হয়েছে মা।
আয় আমার রুমে আয়।
তুমি যাও বাবা।
আমি তোমার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসছি।
দুজনে কফি খেতে খেতে গল্প করবো।
কফিটা খুব ভালো হয়েছে মা।
থ্যাংকু বাবা।
বাবা তুমি এতো রেগে থাকো কেন সবসময়?
বয়স হয়েছে তো,তাই হয়তো মেজাজ ঠিক রাখতে পারি না।
বাবা শোন আমি কিন্তু এক বছর তোমার সাথে থাকবো।
থাকবি। তোকে নিষেধ করেছে কে?
তোমার জামাই পনেরো দিনের ছুটিতে আসছে।এক সপ্তাহ তো চলেই গেল। আমাকে ছেড়ে এক বছর থাকতে হবে,বেচারার মন এমনিতেই খুব খারাপ থাকে প্রায়ই সময়।
বাবা এ কয়টা দিন তুমি ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করো না।
আচ্ছা ঠিক আছে কথা দিলাম করবো না খারাপ ব্যাবহার।
বাবা..
বল।
আমি এক বছর তোমার কাছে কেন থাকবো জিজ্ঞেস করলা না?
তোর ইচ্ছে হয়েছে বাবার সাথে থাকতে, তুই থাকবি।
আচ্ছা ঠিক আছে বল, কেন থাকবি?
বাবা তুমি নানা হবে।
আমি চাই আমার বাচ্চা প্রথমে তার নানার কোলে উঠুক।হবার পর ও নানার আদর কাছ থেকে পাক।
এ কথা তুই আমাকে আগে বলিসনি কেন?
আয় আমার কাছে আয়।
আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাক।
নায়লা সাথে সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাবার কোলে শুয়ে পড়লো।
মোজাম্মেল সাহেবের মনটা আদ্র হয়ে উঠেছে গভীর মমতায় চোখ ভিজে উঠছে।
তার ভাবতেই অবাক লাগছে,তার আদরের ছোট্ট রাজকন্যা টা কোন ফাঁকে এতো বড় হয়ে গেল!
এই তো সেদিন ও কোলে নিয়ে ঘুরেছে।আজ তার কোল জুড়ে ও আরেক টা রাজকন্যা আসবে পৃথিবীতে।
আনন্দের সময় গুলো কতো দ্রুত শেষ হয়ে যায়।
কবে তুই এতো বড়ো হয়ে গেলি মা।
চাঁদের মিষ্টি আলো এসে পড়েছে নায়লার মুখে।
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন নায়লাকে ঠিক যেন দেবীর মতো লাগছে।
মোজাম্মেল সাহেব গভীর মমতায় মেয়ের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছেন।
তুই ঘুমা মা।আরাম করে ঘুমা। আমি কথা দিলাম কোন দুঃখ যেন তোকে ছুঁতে না পারে আমি সেই চেষ্টা করবো। পৃথিবীর সব সুখ তোর হোক।
রোকেয়া পপি
লেখিকা
বাংলাদেশ
2021-03-13 20:37:34
2021-01-06 00:38:27