তুরস্কের সামরিক ড্রোন রফতানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশটি ক্রমেই এ খাতে চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে। ফলে ককেসাস, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় সামরিক ভারসাম্যে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে তুরস্ক ও আজারবাইজানের মিডিয়ায় এমন বহু ভিডিও পোস্ট করা হয় যাতে দেখা যায় যে নাগারনো-কারাবাখ অঞ্চলে আর্মেনিয়ার বাহিনীর উপর হামলা করছে সশস্ত্র ড্রোন। এই ছিটমহলটি আজারবাইজানের হলেও নিয়ন্ত্রণ করছে জাতিগত আর্মেনিয়ানরা।
তুরস্কের আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা যদি এই ড্রোন নির্মাণের সামর্থ অর্জন না করতাম তাহলে ৩০ বছর ধরে গড়ে তোলা সামরিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা আজারবাইজানের জন্য কঠিন হতো। সেখানে ট্যাঙ্ক ও কামানও ছিলো।
নাগারনো-কারাবাখ সংঘাতে কানাডিয়ান প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠার পর কানাডা তুরস্কের কাছে ড্রোন-সংশ্লিষ্ট উপাদান রফতানি স্থগিত করেছে।
তুরস্কের ড্রোন নির্মাতা কোম্পানিগুলো যে এই খাতে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে এটা তার একটি নমুনা। তারা এখন চীন, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রতিষ্ঠিত ড্রোন নির্মাতা দেশগুলোকে চ্যালেঞ্জ করছে।
২০১৮ সালে তুরস্কের প্রতিরক্ষা কোম্পানি বেকার ডিফেন্স কাতার ও ইউক্রেনের কাছে টিবি-২ ড্রোনের কথা ঘোষণা করে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন তুরস্কের ড্রোন এখন লিবিয়া ও আজারবাইজানেও উড়ছে। গত সেপ্টেম্বরে তুরস্কের সেলকুক কেরাকতারের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা স্থানীয় মিডিয়াকে বলেন যে তারা চারটি দেশে ড্রোন রফতানি করেছেন। কিন্তু তিনি দেশগুলোর নাম বলেননি।
গত মার্চে ডিফেন্স নিউজের এক খবরে বলা হয়, টার্কিশ এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি (টিএআই) তিউনিসিয়ার কাছে ছয়টি এএনকেএ-এস ড্রোন ও তিনটি গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন রফতানির অর্ডার পেয়েছে। এর মূল্য ২৪০ মিলিয়ন ডলার।
তুরস্ক সরকারের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ইসমাইল দেমির এই পত্রিকাকে জানিয়েছেন যে অন্তত সাতটি দেশের সঙ্গে ড্রোন রফতানি নিয়ে তুর্কি প্রতিষ্ঠানগুলোর আলোচনা হচ্ছে।
এশিয়াকেও সম্ভাব্য বাজার হিসেবে দেখছে তারা। বিশেষ করে পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের প্রতি তাদের নজর
গত গ্রীষ্মে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহথির মোহাম্মদ তুরস্ক সফরকালে ড্রোন তৈরির দুটি স্থাপনা পরিদর্শন করেন। তার সঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোগানও ছিলেন।
তুরস্ক অতীতে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইসরাইলী ড্রোন ব্যবহার করতো। কিন্তু ২০১০ সালের পর তারা নিজেরাই ড্রোন তৈরি শুরু করে।
গত জুলাইয়ে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন যে সিরিয়া ও লিবিয়ায় তুরস্কের ড্রোনগুলো ‘গেম চেঞ্জিংয়ের’ কাজ করছে।
সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলোক্সান্ডার ভুকিক সাংবাদিকদের বলেন, তার দেশ তুরস্ক থেকে টিবি-২ ড্রোন কেনার জন্য আলোচনা করছে। এর আগে দেশটি চীনের কাছ থেকে সিএইচ-৯২এ ড্রোন কেনে, যা কোন ইউরোপিয়ান দেশে চীনের প্রথম ড্রোন রফতানি।
জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে যে ত্রিপলি সরকারকে তুরস্কের টিবি-২ ড্রোন সাহায্য করছে। অন্যদিকে ইস্টার্ন লিবিয়ান ফোর্স ব্যবহার করছে চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপের তৈরি ড্রোন। এগুলো তারা আরব আমিরাতের কাছ থেকে পেয়েছে।
2021-05-04 18:39:22
0000-00-00 00:00:00