সাংবাদিকতা নয়; এ যেন ফেরিওয়ালা…জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল।।

সমাজের একটা শ্রেণীর কাছে দুর্দান্ত সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত, তেমন কিছু তেলবাজ ও অতি চাটুকার শ্রেণীর তথাকথিত সাংবাদিকদের কারেন মফস্বলের সাংবাদিকতা আজকাল ফেরিওয়ালার পণ্যে পরিণত হয়েছে!
আর কিছু স্বার্থান্বেষী অসৎ ও প্রচারপ্রিয় পেশাজীবী মানুষ আছে যারা নিজেদের অসততাকে আড়াল করতে ওইসমস্ত তথাকথিত সাংবাদিকদের ব্যবহার করে টুপাইসের বিনিময়ে ফরমায়েশি সংবাদ তৈরী করিয়ে নেয়।
ফেরিওয়ালারা যেমন পণ্যাদি বাড়িবাড়ি গিয়ে ঘরেঘরে পৌঁছে দেয়। তেমনি আজকাল কিছু চাটুকার শ্রেণীর লোলুপ লোক গণমাধ্যমে প্রবেশ করে সাংবাদিকতাকে ফেরিওয়ালার পণ্যের চাইতেও সস্তা বানিয়ে ছাড়ছে!
যার ফলশ্রুতিতে রাষ্টের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যমের কর্মীরা (সাংবাদিক) নিজেরাও অতিমাত্রায় সস্তা হয়ে যাচ্ছে! গুরুত্বহীন হয়ে যাচ্ছে!
প্রশাসন, রাজনীতি কিংবা অন্য যেকোনো পেশার লোকদের সাথে সাংবাদকর্মীদের ব্যাক্তি সখ্যতা কিংবা নিবিড় সম্পর্ক থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কেননা দিন শেষে গণমাধ্যম কর্মীরা মানুষ।
তবে, আপনার হাতে অর্পিত রাষ্টের চতুর্থ স্তম্ভের মর্যাদা রক্ষার দায়িত্বও আপনার।
রাষ্টের ভৌগলিক সীমারেখা রাষ্টের একটি স্তম্ভ। একে যেভাবে অতন্দ্র প্রহরীর মতোই পাহারা দেয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। তারা খুব নিকটে অবস্থান করেও প্রতিবেশী রাষ্টের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের সাথে রাষ্টের প্রয়োজন ছাড়া অসখ্যতাও গড়েতুলতে না।
যেমনটি একজন বিচারকের বেলায়ও দেখা যায়। রাষ্টের আরেক স্তম্ভ বিচার বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করা বিচারকগণ যখন তার খাসকামরা কিংবা এজলাসে বসেন তখন তিনি আর ব্যাক্তি থাকেন না। সেখাতে তিনিই রাষ্ট্রের স্তম্ভ।
তেমনি আপনিও যখন সাংবাদিক/সংবাদকর্মী তখন আপনি ব্যাক্তি নয় চতুর্থ স্তম্ভ।
সুতরাং সাংবাদিকতাকে পুঁজি করে সখ্যতা গড়েতুলতে খানিকটা ভাবা উচিৎ- “আপনি কিংবা আপনার গণমাধ্যমটি কারোর দাসত্বে পরিণত হচ্ছেনা তো?”
কথাটি কেন বললাম, সাতসকালে ফেসবুক চালু করতেই এমন কিছু সংবাদের নোটিফিকেশন এলো, যেগুলোতে চোখ রেখে একজন গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে লজ্জিত বোধ করলাম!
একজন ব্যাক্তি হিসেবে কিছু কিছু বিষয়কে ফেসবুক পোস্ট আকারে প্রকাশ করতেই পারেন। কিন্তু প্রশাসনের/সরকারী কর্মকর্তাদের ব্যাক্তিগত বিষয়গুলোকেও সংবাদ আকারে প্রকাশ করা চাটুকারিতার সামিল। কর্মকর্তা ব্যাক্তিগত ভাবে কখন কোথায় গেলো, কি করলো, কি খেলো, কোথায় সেল্ফী তুললো, কোনো স্টেশনে চাকুরীর মেয়াদ কতো হলো! এসব নিয়ে সংবাদ প্রকাশে ব্যস্ত এরা। এদের এই ভাব দেখে মনে হচ্ছে ” স্যার কখন টয়লেটে যাবেন” সেখানেও ক্যামেরা নিয়ে যাবার বাকি!
যাইহোক, আপনি স্যারের পারসোনাল ক্যামেরাম্যান-চাটুকার যা ইচ্ছে হয়েযান, তাতে রাষ্টের কিংবা রাষ্টের নাগরিকদের কিচ্ছুই যায় আসে না। তবে, এসব হাবিজাবি বিষয়কে সংবাদ হিসেবে প্রকাশ করার জন্যেই কিংবা এসব দিয়ে করেকেটে খাওয়ার জন্যে আপনাকে চতুর্থ স্তম্ভের গুরুদায়িত্ব দেয়া হয়নি!
এবিষয়ে আপনার ন্যুনতম দায়িত্বজ্ঞান কিংবা দায়িত্ববোধ থাকা জরুরী। আপনি এই আদর্শিক ধারার বাইরে গিয়ে এই স্তম্ভের সাথে জড়িত সবার অস্তিত্বে আঘাত করতে পারেন না! এটা অনিয়ম।
অনিয়মটাই যদি নিয় নিয়ম হতো তাহলে বিচারকগণ তার অফিসে আসা মেহমান, আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধবকে পাশের চেয়ারে বসিয়ে রেখেই বিচারকার্য সম্পাদন করতেন। অন্যদিকে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরাও অহরহ সীমান্তরেখা অতিক্রম করে পাশের দেশের সীমান্তরক্ষী সদস্যদের বাসায় দাওয়াত খেতে যেতো!
আসলে আপনার/আমার কথা কি বলবো। যারা কোনটা স্বীকৃত গণমাধ্যম কোনটা অস্বীকৃত তার বিচার না করে আমাদের হাতে ক্যামেরা দেখলেই দেদারসে আমাদেরকে সাংবাদিক বলে যাচ্ছেন! তাদের কি বলবো বলেন?
আর যারা চতুর্থ স্তম্ভের সনদ আমার/আপনার হাতে তুলে দেবার আগে যিনি ন্যুনতম জানারও চেষ্টা করেননি- আমি কে, কি আমার যোগ্যতা? যারা টাকার বিনিময়ে আমার/আপনার হাতে এই দায়িত্ব তুলে দিলেন! যারা বিকাশ কিংবা রসমালাইয়ের পেকেট পেয়ে নিত্যদিন ছেপে যাচ্ছেন, প্রকাশ করে যাচ্ছেন আমি যা’ই পাঠাচ্ছি, তা’ই! মূলধারার সাংবাদিকদের প্রশ্নবিদ্ধ করছে! আগে সেইসব কুলাঙ্গারদের এই পেশা/ব্রত থেকে ঝাঁটাপেটা করে বিদায় করা জরুরী।

2021-01-30 06:29:31

0000-00-00 00:00:00

Published
Categorized as 17

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *