সংকট ও সংশয়ে মধ্যে সৌদি প্রবাসীরা

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিপর্যস্ত সারাবিশ্ব। অতীতে মানবজাতি বিভিন্ন সময় বড় বড় সংকটে পড়লেও একসঙ্গে বিশ্বজুড়ে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তবে এবার সারাবিশ্ব একসঙ্গে মোকাবেলা করেছে করোনার ভয়াবহতা। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। বিশেষ করে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আটকে পড়া ও চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরা প্রবাসী রেমিট্যান্সযোদ্ধারা রয়েছেন মহাসংকটে। দীর্ঘদিন ধরে কাজের বাইরে থাকা এসব প্রবাসী আর্থিক সংকটে দিন কাটাচ্ছেন। এদিকে গত ২৫ মার্চ থেকে সব দেশের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সৌদি সরকার। তখন রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কাছে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা ৮৬ হাজার ভিসা ছিল। তার মধ্যে ৯০ শতাংশ ভিসা সৌদি আরবের।

সৌদি দূতাবাসের বরাত দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারা ২৫ হাজার নতুন ভিসা নবায়ন করে দেবে। তাতে প্রায় ৫২ হাজার ৪০০ নতুন কর্মীর সৌদি যাওয়া এই মুহূর্তে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বলছে, এত কর্মীর ভিসা নবায়ন না করা হলে পথে বসা ছাড়া আর উপায় থাকবে না। জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রাও বিষয়টি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। তবে তারা এখনও স্পষ্টভাবে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।

বায়রা’র দেওয়া তথ্য মতে, মার্চ পর্যন্ত সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা ভিসার পরিমাণ ছিল ৮৬ হাজার। এর মধ্যে ৮৬-৯০ শতাংশ ভিসাই সৌদি আরবের। বাকিগুলো বিভিন্ন দেশের। সেই হিসেবে ৭৭ হাজার ৪০০ ভিসা শুধু সৌদি আরবের। এসব ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে আগেই। তাই কর্মীর সৌদি আরব যেতে এগুলো নবায়ন করতে হবে। কারণ প্রতিটি ভিসার মেয়াদ ছিল ৩ মাসের।

শ্রমবাজারে কর্মী ইস্যুতে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বুধবার বৈঠক করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানান, যারা মার্চে ভিসা পেয়েছিল কিন্তু সেটা ব্যবহার করতে পারেনি সেগুলো বাতিল করে আবার রি-ইস্যু করবে। সৌদি দূতাবাসের লোকবল কম আছে, তাদের ধারণা ২৫ হাজারের মতো নতুন ইস্যু করতে হবে। সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে কিন্তু সবাই যাবে। সেটাই আমাদের তারা আশ্বাস দিল যে ধৈর্য ধরতে হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়ার পরও সংশয়ের মধ্যে আছে রিক্রুটিং এজেন্সি এবং সৌদিগামী কর্মীরা। রিক্রুটিং এজেন্সির সংশয় হলো, ভিসা নবায়ন না করলে এই টাকা কর্মীদের ফেরত দেওয়া নিয়ে। আবার নতুন প্রক্রিয়া বেশ সময় সাপেক্ষ এবং অর্থেরও বিষয় আছে। আর কর্মীরা সংশয়ে আছে টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে এবং আদৌ যেতে পারবে কিনা সেই সংশয়ে।

সৌদি আরবের টিকিটের জন্য ঢাকায় আসা মাহির উদ্দিন জানান, তিনি তার ছোট ভাইয়ের ভিসার জন্য এজেন্সির কাছে টাকা জমা দিয়েছেন। মেডিক্যালসহ সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পরও করোনার কারণে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে যেতে পারেনি। তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে এজেন্সি। এখন যেতে হলে ভিসা নবায়ন করতে হবে। কিন্তু দূতাবাসের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেটিও সম্ভব হয়নি। তার এজেন্সি জানিয়েছে, দূতাবাস থেকে ভিসা রিনিউ করার এখনও কোনও নির্দেশনা তারা পায়নি।

বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ৮৬ হাজার ভিসার মধ্যে ৯০ শতাংশ হলো সৌদি আরবের। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন ২৫ হাজার ভিসা রিনিউ হবে। আমরাও শুনেছি কিন্তু আমাদের এখন পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। বাকি ভিসা যেগুলো এজেন্সির কাছে আছে এগুলোর কী হবে আমরা এখনও জানি না। যদি এগুলো রিনিউ না হয় তাহলে সবাই পথে বসে যাবে। ১৫০০-২০০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে যদি আমার মাত্র ২৫ হাজার লোক যায় তাহলে কি ধারণা করা যায়, কি অবস্থা হবে এজেন্সিগুলোর। কর্মীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা আমি কিভাবে ফেরত দেবো?

তিনি আরও বলেন, সৌদি দূতাবাস খোলার পর আমাদের যে ভিসাগুলো আছে তার জন্য একটা গাইডলাইন দিয়েছে। সেই অনুযায়ী কাজ করে যত কর্মী যেতে পারবে যাবে, না পারলে যাবে না। তার জন্য আমার নিয়োগকর্তার কাছ থেকে ভিসা বাতিল করে নতুন করে আবার ভিসা আনতে হবে, সেখানে যাদের নিয়োগকর্তা ভিসা দিবে না তারা যেতেই পারবে না। যাদের পাওয়া যাবে তাদের আবার নতুন প্রসেস করে পাঠাতে হবে। এখনও আমরা জানি না কতগুলা ভিসা আমরা পাবো। অনেক প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে গেছে করোনার কারণে , তারা হয়তো লোক নেবে না অথবা যেখানে ৫০০ কর্মী দরকার ছিল সেখানে ১০০ নিচ্ছে। ২৫ হাজার ভিসা নবায়নের বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার না।

সঠিক তথ্য সরকারের হাতে না থাকায় বলে এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান। তিনি বলেন, প্রথমত কী পরিমাণ লোক আটকে আছে , ভিসা করার পর কী পরিমাণ লোক যেতে পারেনি এই তালিকা সরকারের কাছে থাকা খুব জরুরি ছিল। তাহলে কিন্তু আমরা বুঝতে পারতাম যে আমাদের কত লোক যেতে পারছে না। তাতে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হতো।

সেই কাজটি কিন্তু আমরা করতে পারিনি। যার কারণে সমস্ত সংকটের মূলে কিন্তু তথ্য না থাকা। অথচ এটা কিন্তু কোনও কঠিন কাজ ছিল না। আমরা আগে থেকেই জানতাম যারা ছুটিতে আসছে তাদের ফেরত যাওয়া নিয়ে এবং যারা টাকা পয়সা দিয়ে ফেলেছে যাওয়ার উদ্দেশে তাদের জন্য একটি সংকট তৈরি হতে পারে। এখানে বায়রার হাজার কোটি টাকা আটকে আছে। প্রবাসে যারা আছে তারা কিন্তু নিজেরাই তাদের চাকরির মেয়াদসহ অন্যান্য কাজ নিজেরাই করে নিচ্ছে, সেখানে কিন্তু আমাদের বেশি কাজ করতে হচ্ছে না। আমরা এক্টিভ হয়ে একটু আগে থেকে যদি উদ্যোগ নিতে পারতাম তাহলে কিন্তু সংকট কিছুটা কম হতো।

2021-01-30 06:29:31

0000-00-00 00:00:00

Published
Categorized as 17

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *