১৯০৫ সালে যখন বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন দানা বেঁধে উঠে, তখনও সাম্প্রদায়িকতা ছিল না বাঙ্গালী সমাজে। আন্দোলন পূর্ববঙ্গেই অধিক পরিমানে হয়েছে, কারন সাম্প্রদায়িকতা তখনও পূর্ববঙ্গে মাথা খাড়া করে নি। পূর্ববঙ্গে জমিদার আর শিক্ষিতদের মধ্যে হিন্দুরা প্রধান ছিল ঠিকই কিন্তু এই আন্দোলনে তাঁরা মুসলমানদের আগ্রহের সাথে সঙ্গী করে নিয়েছিল। কোথাও কোথাও তাঁরা মুসলমানদের মধ্যে থেকে সভাপতি নির্বাচন করেছিল আন্দোলনের খাতিরে।
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ যখন এই আন্দোলনের সাথে একাত্ম হয়ে উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা সকলের কাছে যাও, যাবে দিনের ‘অস্তসূর্যের দিকে মুখ ফিরাইয়া যে মুসলমান নামাজ পড়িয়া উঠিয়াছে’ তাঁর কাছেও।
প্রসঙ্গ ক্রমে প্রশ্ন আসেই, বাঙ্গালীর এই ঐক্য তথা শ্রেণী-জাতীয়তাবাদ কি আসলেই কোন সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দিয়েছিল? এখানে আরেকটি প্রশ্ন থাকতেই পারে, বাঙ্গালী শ্রেণী-জাতীয়তাবাদ কি আসলে কোন জাতীয়তার পরিচয় বহন করে নাকি এই শ্রেণী-জাতীয়তাবাদ বিভিন্ন গোষ্ঠী যেমন উচ্চবিত্ত, শিক্ষিত মধ্যবিত্তের স্বার্থ আদায়ের হাতিয়ার হয়ে নিন্মবৃত্তের সামাজিক ঐক্য কিংবা সৌহার্দ নাকি সেই গোষ্ঠীর সামাজিক পদোন্নতির হাতিয়ার।
১৯০৫ সালে যে সাময়িক এক তরফা ঐক্য আমরা দেখেছিলাম হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে যেখানে হিন্দু জমিদার কিংবা কিছু মুসলমান ধনী বনিক কিংবা শোষক ছিল এক মঞ্চে, এই ঐক্য টিকে থাকেনি ১৯৪৭-এ। ৪২ বছরে বদলে গেছে ঐক্যের সংজ্ঞা। সেখানে এসেছে হিন্দু জাতীয়তাবাদ, এসেছে মুসলিম জাগরনের আওয়াজ। দুটোই সমাজ শ্রেণীর একই রুপ। হিন্দু জমিদার শ্রেণী গরীব হিন্দুদের ভুলে গিয়ে আধুনা ভারতে বসত করলো আর ধনী মুসলমান গরীব মুসলমানদের ভুলে গিয়ে পাকিস্তানে বসত গড়ল।
(চলবে)
মুকুল খান
সিডনি
2021-09-13 17:28:15
2021-09-13 07:28:15