শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশে

গতকাল রাত ১১টায় বাসায় ফিরে জানলাম দুপুর থেকে পানিতে দুর্গন্ধ, তাই আবার বের হলাম ফিটকিরি কিনতে। কেজিখানেক ফিটকিরি কিনলাম, কিন্তু এর জন্য বালতি-গামলার বাড়তি ব্যবস্থাপনা করা অসম্ভব মনে হলো! 
মাসখানেক ধরেই বাসার লাইনে ঘোলা পানি। বাড়ীওয়ালা লাইন-ট্যাঙ্কি সব পরিষ্কার করেছেন, কিন্তু সেই একই অবস্থা। গতকাল থেকে দুর্গন্ধ এলাকার সব বাসার পানিতে। 
আজ ভোরেই মেয়েটা আক্রান্ত হলো। অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হলো। বাড়ীওয়ালাকে বললাম। বললেন, কি করবেন? শ্রীলংকাকে দেখছেন না? সামনে আরো খারাপ দিন আসছে!
বললাম, আপনারা এলাকার বাড়ীওয়ালারা মিলে একটু সিটি কর্পোরেশনকে বলেন। তিনি বললেন, কারে বলবেন? হুদাই! আল্লার উপর ভরসা করা ছাড়া উপায় নাই।
কিন্তু আমি ভরসা করতে পারি না। সকালে ছেলেটাকে সাথে নিয়ে কিছু বড়ো পানির ক্যান হাতে করে বের হলাম। আশেপাশে আলাপ করলাম। 
এক দোকানদার রেগে বললেন, হেই নাকি পদ্মার পানি খাওয়াইবো আমাগো! এই কইয়া বড়ো বড়ো পাইপ বসাইয়া গেলো, হেরপর থেইকাই এইরহম ঘোলা পানি খাইতাছি! চোখ-মুখ বন্ধ কইরা মাথায় পানি ঢালি! পানির দিকে তাকাই না!
বললাম, কি করবেন? বাঁচতে তো হবে! আপাতত বাঁচার জন্য এখানে ডীপ টিউবওয়েল কোথায় আছে?
তার কথামতো গেলাম কিছুদূর হেঁটে। গিয়ে যা জানলাম, সেখানেও উন্নয়নের খোঁড়াখুড়ি চলছে, তাই কয়েক মাসের আগে হবে না। সেখানকার তত্ত্বাবধায়ক ছেলেটা ভালো। বলে দিলো লালবাগ শায়েস্তা খান পানির পাম্পে যেতে। সেখানে গিয়ে পানির কার্ড করতে হবে এবং তার জন্য এনআইডি ও ছবি নিয়ে যেতে হবে।
বাসায় ফিরে এসে এনআইডি ও ছবিসহ পানির ক্যান নিয়ে আবার দুজনে ছুটলাম কোথায় সেই শায়েস্তা খানের আমল আছে সেটা দেখতে!
সেখানে যাওয়ার পর কর্মরত ছেলেটা বললো, এনআইডি আর দুই কপি ছবি আনছেন? বললাম, এক কপি ছবি আনছি। বললো, হইবো না। আরেক কপি লইয়া আসেন।
ছেলের হাতে পানির ক্যানগুলো দিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখে আবার বাসায় গিয়ে ছবি নিয়ে এলাম। আধাঘণ্টার মধ্যে স্মার্ট প্রিপেইড পানির কার্ড হাতে পেলাম। ৪০ পয়সা লিটার। এক্কেবারে শায়েস্তা খানের আমল! এখন থেকে প্রতিদিন ক্যান নিয়ে এখানে এসে কার্ড পাঞ্চ করে পানি নিয়ে যেতে হবে বাসায়। ব্যালান্স শেষ, পানিও শেষ! আবার টাকা ভরতে হবে মোবাইলের মতো! 
খুব মজা তো! বেশ স্মার্ট লাগতে লাগলো! আমরা বাপ-বেটা কার্ড পাঞ্চ করে ক্যানে পানি ভরে টানতে টানতে আর ঘামতে ঘামতে বাসায় এলাম। 
বুঝতে পারলাম এখন থেকে আমাদের প্রতিদিন সকালের কাজ হবে ঝড়-বাদল যা-ই হোক বেশ খানিকটা পথ হেঁটে বা রিকশায় গিয়ে ক্যান ভরে খাবার পানি নিয়ে আসা। আর বাসার দুর্গন্ধময় পানি ফিটকিরি দিয়ে থিতিয়ে-ফুটিয়ে ধোয়াপাকলা-গোসল সবকিছু করা! ভাবতেই আরো স্মার্ট লাগতে লাগলো!
স্মার্ট ওয়াটার কার্ডটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম লেখা Drinkwell। নেটে সার্স দিয়ে জানলাম, এটা ঢাকাকে স্মার্ট সিটি বানানোর জন্য সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি উদ্যোগ! মুহূর্তে আরো স্মার্ট হয়ে গেলাম।
আরো জানলাম, এটা আমেরিকা-কেন্দিক একটা উদ্যোগ! মাননীয় স্পীকার, এবার পুরোই স্মার্ট হয়ে গেলাম শেখ হাসিনার বাংলাদেশে!
নোট: এখন আবাসিক বাড়ীতে ওয়াসার পানির মূল্য লিটার প্রতি ১.৫ পয়সা। অথচ সেই ওয়াসার পানিই তাকে বুথে এসে কিনতে হবে প্রায় ২৫ গুণ বেশী দামে লিটার প্রতি ৪০ পয়সায়!! কিন্তু বদমাইশগুলো এটাকে তুলনা করছে কোম্পানীর পেট বোতলের পানির দামের সাথে! বলা হচ্ছে ১ লিটার পানি যেখানে ২০ টাকা, সেখানে এইটা বহুগুণ সস্তা! 
অথচ এই প্রশ্ন সে এড়িয়ে যাচ্ছে: প্রতিদিন দূরে গিয়ে পানি যদি কিনেই আনতে হবে, তবে বাসার পানির লাইনগুলো কিসের জন্য? এরজন্য হাজার হাজার কোটি টাকা সরকার যে ব্যয় করছে সেই টাকা নাগরিকরা কেন জোগাবে? 
নাগরিকরা মাসে মাসে এরকম পচা পানির বিল কেন দেবে? এই দুর্গন্ধযুক্ত পানির জন্য যতো অসুস্থতা তার দায় কার?
রাখাল রাহা
ঢাকা, বাংলাদেশ। 

2022-04-03 02:48:58

2022-04-02 16:48:58

Published
Categorized as 54

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *