শুধু তোমাকে দেখার জন্য

সূর্যটা ম্লান হতে শুরু করলেই হাঁটা শুরু করি
মহল্লাতে ঢোকার মুখেই বাজারের মতো জটলায় থমকাই কিছু সময়,
দু’টি কুকুর আলসেমি করে সারাদিনই শুয়ে থাকে সেখানে।
আমাকে দেখতে পেলেই তারা উঠে দাঁড়ায়,
তারপর বিশ্রীভাবে ঘেউ ঘেউ শুরু করে আমাকে আক্রমণ করার ভঙ্গি করে।
আমি কিছু‌ই বলি না তাদের 
কষে একটা লাথি দেবার ইচ্ছাও জাগে না কখনো।
সেখানে বসে একজন পঙ্গু ভিখারি  সারাদিনই বেসুরো গান গেয়ে ভিক্ষা চায় সবার কাছে।
অথচ আমাকে দেখলেই 
বেসুরো গান বন্ধ করে একটা উপহাসের হাসি দেয়।
তার উপহাস সহ্য করে অন্য দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকি অবলীলায়।
প্রায় প্রতিবারই একটা না একটা রিকশার চাকা আমার কোনো একটা পা মাড়িয়ে যাবে।
প্রচণ্ড ব্যাথা পেয়েও আমি হাসি ধরে রাখি মুখে।
কোন রকম ঝগড়াঝাটি না করে
খোঁড়াতে খোঁড়াতে হাঁটতে  
থাকি সামনের দিকে।
জটলা করে গুলতানি মারতে থাকা মহল্লার তরুনরা আমাকে দেখেই  কটুক্তি ছুঁড়ে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে।
তাদের কেউ কেউ আবার রাগেও ফুঁসতে থাকে আমার দিকে তাকিয়ে।
আমি পাল্টা জবাবে তাদেরও কিছু বলিনা।
এত সব অপমান, অবহেলা,কষ্ট, চোখ রাঙানি 
সব উপেক্ষা করে 
গলির শেষ মাথার তোমার বাড়িটার ঠিক উল্টা দিকের বাড়ির দেওয়ালের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়াই।
তারপর আয়েশ করে একটা সিগারেটে আগুন ধরাই।
সূর্যটা কখন যে টুপ করে লুকিয়ে পড়ে টেরও পাই না।
পকেটের কতগুলো সিগারেটে আমার অস্থির ঠোঁট পুড়ে যায় সেই সময়
তার হিসাবও রাখিনা কখনো।
সন্ধ্যার যাদুকরী মায়াবী আলোতে 
দোতালার বারান্দার দোলনাটায় বসে তুমি যখন এক কাপ চা নিয়ে আয়েশি ভঙিতে চুমুক দাও,
সেই সময় মনে হয় তুমিই এই মহল্লার রাজকন্যা ।
আর আমি তোমার শত্রু মহল্লার এক ছদ্মবেশী রাজপুত্র।
এক রাজকন্যাকে ছিনিয়ে নিতেই যেনো এই ছদ্মবেশী রাজপুত্রের প্রতিদিনের এই দুর্গম অভিযান।
মনোলীনা,
প্রতি সন্ধ্যারাতের এই যাদুকরী মায়াবী আলোতে 
শুধু তোমাকে দেখার নেশায় 
তোমার মহল্লার বেয়ারা কুকুর, 
অহংয়ে ভরা ভিখারি, 
হিংসুটে রিকশাওয়ালা 
আর মাস্তান যুবকদের সহ্য করি অনায়াসে।
শুধু তোমাকে দেখার জন্য 
আমি পৃথিবীর সব অরাজকতা সহ্য করে যাই অনায়াসে।
রশিদ হারুন
লেখক, কবি।

2022-04-15 21:02:55

2022-04-15 21:02:55

Published
Categorized as 52

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *