একটি সমাজ ব্যবস্থার অবক্ষয় বুঝতে গেলে সমাজে বসবাসরত মানুষের মানবিক গুনাবলি তথা তাঁদের সার্বিক চিন্তাধারাকে আগে অবলকন করতে হবে। মানুষ যখন নাকি বেশি হতাশ আর আত্নবিশ্বাসহীন হয়ে পড়ে তখন তার দিক্বিদিক জ্ঞান থাকে না, লিপ্ত হয়ে পড়ে অমানবিক কাজে, কেউ কেউ অপরিণত বয়সেই পরিণত হয় পশুতে।
সেই মানুষ যত শিক্ষিত আর অশিক্ষিত হোক না কেন, তাঁর মধ্যেকার লালসাকে জাগিয়ে তোলে নিতান্তই এক বনের পশুর মতোই। ভালো-মন্দ, পাপপুণ্যর কোন হিসাব তখন তাঁরা রাখতে ব্যর্থ হয়। রেইপ বা ধর্ষণ আমার কাছে ইদানিং মনে হচ্ছে এমনি এক জ্ঞানহীন পশু সদৃশ আচরণ যার ভয়াল থাবা ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের তথা দেশের সব শ্রেণী পেশার মানুষের মনের এবং রক্তের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যা কিনা সামাজিক অবক্ষয়ের দৃঢ় উদাহরণ।
আমি অনেকদিন থেকেই একটা বিষয় লক্ষ্য করে যাচ্ছি তা হল, এই ধর্ষণ যা কিনা সব সচেতন মানুষকেই আজকাল নাড়া দিচ্ছে। আমি অবশ্য এর একটা কারণ অনেকদিন থেকেই অতি সুক্ষভাবে পর্যালোচনা করছি তা হল, যারা কিনা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত, যার তেমন কোন ভূত ভবিষ্যৎ নেই, যাদের জীবনের লক্ষ্য ঠিক নেই, যারা অনেক ক্ষেত্রে প্রতারিত হয়েছে তাঁদের জীবনে কোন না কোন এক সময়, তারাই প্রথমে দেশে বহুল প্রচলিত মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। যে জিনিস আগে হয়তো শহরে পাওয়া যেত, তা আজকাল কিছু অর্থ লোভীর পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রামের ছেলেদের কাছেও পৌছে গিয়েছে, যা কিনা গ্রামের ছেলেদের মুখ থেকেই আমি জেনেছি এর বিস্তার কত যা আমাকে প্রতিনিয়তই ভাবায়।
কোন এক অদৃশ্য শক্তি হয়তো অনেককেই তাঁদের ভিতর থেকে উৎসাহ যোগায় যা কিনা এক সময় গোটা সমাজ ব্যবস্থাকেই ভোগায়। আর তারই ফলশ্রুতিতে আজ দেশে বেড়ে গেছে ধর্ষণের মত ঘৃণ্য কাজ। মনে হচ্ছে যেন কেউ এইটাকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে চাচ্ছে।
কোন পরিবারকে শায়েস্তা করতে গেলে যেন এইটাই একটা হাতিয়ার, কাপুরুষেরা যখন পুরুষত্ব দেখায় তখন পুরুষদের ঘরে বসে থাকলে কি শোভা পায়? তাই হতে হবে প্রতিবাদী, যেন কেউ ধর্ষণ করেও সাঁজতে না পারে শেখ সাদি। তাঁদের মুখোশ দিতে হবে খুলে আর বিচার করে দিতে হবে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলে। তার আগে বের করতে হবে কে কে আছে এইসবের মূলে। একটি ঘটনার পর আরেকটি ঘটলে যেন আগের টা না যাই ভুলে। ঘৃণা করুণ ধর্ষক পশুদের প্রকাশ্যে, হৃদয় মন্দির খুলে!
এই গর্হিত কাজের পেছনে রয়েছে পেশি শক্তি, আর দ্রুত বিচার হীনতা, যা কিনা অনেককেই আরও উৎসাহ দেয় তাঁদের মনের ভিতর থেকেই আরও অন্যয় কাজ করবার, কারণ কেউ না কেউ ত আছে তাঁদের মাথার উপর ছায়া হয়ে যারা কিনা ঠিকই তাঁদের একসময় প্রশ্রয় দিয়েছিল আর এখন দিবে আশ্রয়, এইভাবে কি ধর্ষণ এর মত জঘন্য কুকর্মের হবে সাশ্রয়? আমার মনে হয় আগেও হয় নাই, এখনো হবে না, আর তাইতো দিনকে দিন পরিসংখ্যান যাচ্ছে বেড়ে, আর কিছু সুশীলের বিবেক উঠছে নেড়ে, তাতে কি এই ধর্ষণ ব্যাধির বর্ষণ যাচ্ছে সমাজ ছেড়ে? না, তা যাচ্ছে না, বরং কিছু নিষ্পাপ জীবনকে নিচ্ছে কেড়ে। তাই সময় এসেছে আমাদের সবাইকে এখনই কাশতে হবে ঝেড়ে!
আমি, দেশে সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া সকল ধর্ষকদের বিচার চাই দৃষ্টান্তমূলক, যেন এরপর অন্য কেউ এমন গর্হিত কাজ করবার আগে চিন্তা করে যে তাঁর জন্য কি শাস্তি অপেক্ষা করছে, যা দেখবে গোটা ভূলোক। আর এমন চিন্তা সবাই করবে যখন তাঁর সঠিক চিন্তা করবার ক্ষমটা থাকবে। সে জন্য পরিবার থেকেই সেই শিক্ষা দিতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেউ সেই দায়িত্ব নিতে হবে।
আমি আগে দেখেছি আমার স্কুল জীবনে, মাঝে মাঝেই দেখতাম স্কুলের স্যাররা দুই একজনকে একটা কক্ষে ঢুকিয়ে সমানে পিটাইতেছে, পরে জানতে পারি যে তাঁরা নাকি মেয়েদের উত্যক্ত করেছিল, সেই পিটানোর শব্দে অনেকদিন কেউ মেয়েদের দিকে তাকাতে সাহস পেত না। কিন্তু এখন কি শিক্ষকরা সেই কাজ করতে পারবে? পারবে না, কারণ যাঁদের দিতে চাইবে বাঁধা, তাঁদের যে আছে বড় বড় দাদা, ভিতরের কলপ তাঁদের আলকাতরা, আর বাহিরে যেন সব বকের মতোই সাদা! তাই তাঁদের কেউ কিছু না বলে বরং মুছে ফেলে তাঁদের ছোঁড়া নোংরা কাদা। যারা এই ধর্ষক পশুদের সাহস দেয়, তাঁদের কি বাড়িতে মা বোন নেই! তাঁরা অবশ্য ভাবে যে, “সবাই মা বোন হলে বউ হবে কে?”
এইসব নরপশুদের আশু সায়েস্তা না করতে পারলে সমাজকে ভুগতে হবে যুগ যুগ। করোনা আজ আছে কাল থাকবে না কিন্তু এই ধর্ষকরা হয়তো রয়েই যাবে, সমাজের নির্যাতিত নারীরা কি তা আজীবন সয়েই যাবে? না, তা হতে দেওয়া যাবে না, তাই এখনই তাঁদের প্রতিবাদ করতে হবে, যখনই যেখানেই কেউ বিন্দু মাত্র চিহ্ন দেখাবে লোলুপ দৃষ্টির, জেগে উঠতে হবে সব সচেতন সৃষ্টির, আর সাথে সাথেই আমাদের সবাইকে তাঁদের পাশে দাড়াতে হবে, আর বাড়াতে হবে সাহায্যর হাত।
নির্যাতিতাদের অবহেলা না করে যদি সাহস জোগানো যায় সামনে এগিয়ে যাবার তাহলেই দুর্বল হবে হিংস্র পশুর ভয়াল থাবার। আজকের দিনে এই প্রত্যাশাই হোক আমাদের সবার। এখনই প্রতিবাদের চোখ রাঙিয়ে কাল সাপের বিষ দাঁত ভেঙ্গে দিতে হবে, এই জন্য আসুন আজ রুখে দাঁড়াবার শপথ করি সবে।
আমি ধর্ষণের প্রতিবাদ করলাম দিয়ে আমার কলমের কালি, আপনিও করুন, এগিয়ে আসুন, হন না কেন বুদ্ধিজীবী কিংবা মালি!
মোঃ আরিফুর রহমান
টেক্সাস, আমেরিকা
2021-01-30 06:29:31
0000-00-00 00:00:00