ভ্যাকসিন নেবার ব্যাপারে যাদের অনাগ্রহ, COVID জনিত মৃত্যুর দায় আপনি নেবেন কি?

বিশ্ববাজারে COVID ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে WHO সাবধান জানানোর প্রাক্কালেই! চীন যেমন প্রথমে চেপে গেছে তার COVID বিস্ফোরণের খবর তেমনি এর রক্ষার সমাধানে কাজ শুরু করেছিল ২০১৯ ডিসেম্বরই! COVID ভাইরাস এর জেনোম সিকোয়েন্স এরাই কিন্তু পৃথিবীকে জানিয়েছে প্রথমে। সেদিক থেকে বিজ্ঞানও এগিয়েছে গত দুদশকে অনেক।

ন্যানোটেকনোলজির বিস্ফোরণ হয়েছে বিংশ-শতাব্দীর শুরুতেই। বলতে গেলে একযুগ আগেই বায়োন্যানোটেকনোলজি বসে আছে সে যে কোনো জেনোম ডিকোড ব্যবহার করে ভ্যাকসিন তৈরি করবে। সতরাং যারা Pfizer অথবা Moderna ভ্যাকসিন নিয়ে উশখুশ করছেন, তারা একটু থামুন আর পড়ুন, আশা করি বাংলাদেশ গুগল সার্চ ইঞ্জিন বন্ধ করেনি। মেসেঞ্জার আরএনএ (mRNA) বিজ্ঞানের এক উপহার যা COVID ভাইরাস এর সকল গুপ্ত তথ্য দিয়ে মানুষের শরীরের এন্টিজেনিক প্রোটিন তৈরী করে যা পরবর্তীতে আমাদের ন্যাচারাল যোদ্ধাকোষকে (সিটোটক্সিন টি সেল এবং হেল্পার টি সেল) সরাসরি COVID ভাইরাস মতন স্পাইক গজিয়ে দেয়, যেন COVID ভাইরাস হানা দিয়ে মাত্র যোদ্ধাকোষ তাঁর শত্রুকে চিনে এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে। শুধু যেহেতু জেনোম ডিকোড ব্যবহার করে এন্টিজেনিক প্রোটিন তৈরী করে, তাই অনেক রোগের mRNA ভ্যাকসিন একবারেই মানুষের শরীরে পুড়ে দেয়া সম্ভব, যা হয়তো অচিরেই দেখা যাবে।

আরো একটি ব্যাপার হলো mRNA পদ্ধতিতে কোনো বিদেশী দুর্বল ভাইরাস প্রয়োজন হয় নাহ। বিদেশী দুর্বল ভাইরাস কে ঘষে মেজে COVID ভাইরাস এর স্পাইক গজিয়ে COVID এর অনুরূপ ভাইরাসের (vector প্রসেস) যে ভ্যাকসিন তৈরী পদ্ধতি সেটা সনাতন। এ বাক্য পড়েই বোঝা সম্ভব কার্যকারিতা কম হবে, কারণ একেতো নুতন স্পাইক গজালো আবার তাকে পুড়ে দিলো অচেনা দেশ মানুষের শরীরে। এ পদ্ধতিতে আমাদের ন্যাচারাল যোদ্ধাকোষ নুতন স্পাইক ওয়ালা দুর্বল ভাইরাসকে পরাস্থ করে COVID এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা শেখে। ব্যাপারটা যেহেতু হিট আর ট্রায়াল মতন অনেকটা, তাই অক্সফোর্ড আর অস্ট্রেজেনিকার এ পদ্ধতির ভ্যাকসিন ৭০ শতাংশ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিচ্ছে, অন্তত এখন পর্যন্ত তথ্য উপাত্ত্ব অনুযায়ী। পক্ষান্তরে Pfizer অথবা Moderna ভ্যাকসিন এর কার্যকারিতা ৯৪ শতাংশের বেশি।

কার্যকারিতার কথা বললে দামের ধরণ তাই ভিন্য। ইউরোপে Pfizer ভ্যাকসিন ৩৩ ইউরো, Moderna ভ্যাকসিন ৬২ ইউরো মূল্যের। অক্সফোর্ড আর অস্ট্রেজেনিকার সেক্ষেত্রে মাত্র ৬ ইউরো। সনাতন পদ্ধতির বদৌলতে অক্সফোর্ড আর অস্ট্রেজেনিকা সহ সকল ফার্মাসিউটিকেল ইন্ডাস্ট্রি এই সাশ্রয়ী মূল্যে অক্সফোর্ড আর অস্ট্রেজেনিকা ভ্যাকসিন তৈরী করতে পারে, যেমন করছে ভারতের সিরাম কোম্পানি। Pfizer অথবা Moderna ভ্যাকসিন নুতন প্রযুক্তির কিন্তু ফার্মাসিউটিকেল ইন্ডাস্ট্রি এখনো সেভাবে তাদের প্রস্তুত করতে পারেনি, তাই তাদের বাজারটা একক, মূল্যও কয়েক দশক গুন। যেকোনো পণ্যের মতো সরবরাহও তার আরেকটি ব্যাপার, তাই মাইনাস ৮০ ডিগ্রির Pfizer ভ্যাকসিন সরবরাহ যেমনটা কঠিন তেমনি স্বভাবতই বিশ্ব চাহিদা Moderna ভ্যাকসিন মতো হচ্ছে নাহ। Moderna ভ্যাকসিন দামও তাই Pfizer এর দ্বিগুন। এখন তাহলে ভারতের সিরাম এর তৈরী অক্সফোর্ড আর অস্ট্রেজেনিকা প্রতি ভ্যাকসিন মূল্যের থেকে সম্ভবত ১০০ টাকায় বেশি বাংলাদেশে হলে খুব আশ্চর্য হবার আছে কি? আবারো বলি ইউরোপে সেই ভ্যাকসিন এর জন্যে বাংলাদেশী টাকায় আমাদের দিতে হবে ৬০০ টাকার বেশি।

ঔষধ মানেই এর পারশ্বপতিক্রিয়া থাকবে, ভ্যাকসিনও বিকল্প নয়। আমেরিকা এখন পর্যন্ত ২.৫ মিলিয়ন ভ্যাকসিন দিয়েছে, যার মধ্যে শুধু মাত্র শখানেক মানুষ পারশ্বপতিক্রিয়া যেমন হালকা জ্বর, স্কিন রেশ মাথা ব্যথা পেয়েছে, কেউ ভ্যাকসিন নিয়ে মারা গেছে বলে আমি এখন জানি নাহ।

এতকিছু লেখার উদ্দেশ্য হলো আমরা বিজ্ঞানীরা ঘরের খেয়ে বনের মহিষ তাড়াই, তবে সেটা ছোট্ট স্বার্থে, মানবতার কল্যাণ! দেখতে পাই অনেক শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ভ্যাকসিন নেবার ব্যাপারে অনাগ্রহ এবং নিরুশ্বাহিত করছেন! আপনাকে যারা অনুস্মরণ করেন, তার ভ্যাকসিন নেয়াটা যদি আপনার জন্যে না নেয়া হয়, তার নাহোক COVID জনিত মৃত্যুর দায় আপনি নেবেন কি!

D M S Sultan
Research Associate at CERN
Geneva, Switzerland

2021-03-15 22:17:21

2021-03-15 11:17:21

Published
Categorized as 54

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *