ভালোবাসার-টানে-বাংলাদেশে-গিয়ে-ম্যালকমের মানবেতর-জীবনযাপন

বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাস নিয়ে বই লিখতে ২০০১ সালে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন ম্যালকম আর্নল্ড, তারপরেই মোংলায় দেখা পান স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় তরুণী হালিমার। 
ভালোলাগা থেকে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে গিয়ে মোংলার স্বামী পরিত্যক্তা হালিমাকে বিয়ে করেন আর্নল্ড। এরপর এদেশেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন। 
আর এই সিদ্ধান্তের জন্যই জন্মভূমি অস্ট্রেলিয়ায় থাকা সহায়-সম্পদ বিক্রি করে খুলনায় সেই থেকে সেখানেই আছেন সস্ত্রীক। ছবি এঁকে জীবিকা নির্বাহ করতেন তবে এখন তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। 
অর্থাভাবে তার চিকিৎসা হচ্ছে না, দিতে পারছেন না বাড়ি ভাড়া। এমনকি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়াও হচ্ছে না। ম্যালকম আর্নল্ড তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, স্ত্রীই এখন আমার সব। সে আমার সেবা শশ্রসা করছেন মন প্রাণ দিয়ে। আমার পাশে আছে দীর্ঘকাল। আমি অস্ট্রেলিয়া ফিরতে চাই না।
তিনি আরও বলেন, এদেশের প্রাণ-প্রকৃতি ও জীবনধারার ছবি এঁকে জীবিকা নির্বাহ করতাম। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ছবি বিক্রিও হয় না এখন। অসুস্থ হওয়ার কারণে আগের মতো ছবি আঁকতেও পারি না। 
হাত কাঁপে, অর্থাভাবে চিকিৎসা করানো কঠিন হচ্ছে। ম্যালকমের স্ত্রী হালিমা বেগম বলেন, স্বামী পরিত্যক্ত হওয়ার পর ছোট মেয়েকে জীবন বাঁচাতে মোংলায় ওয়ার্ল্ড ভিশনের হয়ে কাজ করতাম। ২০০১ সালে ম্যলকম আর্নল্ড মোংলায় এলে তার সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি আমার বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন। এরপর তিনি অস্ট্রেলিয়ায় গেলেও আমাদের মধ্যে চিঠি বিনিময় ছিল। 
এরপর হালিমা অসুখে পড়লে ঢাকায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসক তাকে অস্ত্রোপচার করতে বলেন। কিন্তু অর্থাভাবে তার চিকিৎসা বন্ধের উপক্রম হয়ে যাচ্ছিল। তিনি বিষয়টি চিঠি লিখে আর্নল্ডকে জানান। 
খবর পেয়ে বন্ধুদের কাছে থেকে দুই হাজার ডলার সংগ্রহ করে ২০০৩ সালে বাংলাদেশে আসেন আর্নল্ড। খুলনায় রেখে হালিমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন তিনি। সুস্থ হওয়ার পর ফিরে যাওয়ার আগে হালিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন আর্নল্ড। তখন হালিমা জানান, ‌আর্নল্ড ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হলে এবং এদেশে থাকলে তিনি বিয়েতে রাজি। 
এরপর আর্নল্ড দেশে ফিরে যান। পছন্দের মানুষটির জন্য জন্মভূমির বাড়ি ও জমি বিক্রি করা অর্থ নিয়ে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আর্নল্ড বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং তাকে বিয়ে করেন। 
সেই থেকে এই অস্ট্রেলীয় নাগরিক বাংলাদেশেই আছেন। অস্ট্রেলিয়ায়ও তার স্ত্রী-সন্তান ছিলেন। মোংলার নারী হালিমার সঙ্গে পরিচয়েরও ১২-১৩ বছর পর সেই স্ত্রীর সঙ্গে আর্নল্ডের বিচ্ছেদ হয়। হালিমা জানান, তাকে বিয়ের পর আর্নল্ড বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে তার কাঙ্ক্ষিত বইয়ের কাজ শেষ করেন। প্রিন্ট করার জন্য ঢাকার একটি পাবলিকেশনে বইয়ের পাণ্ডুলিপিও দেন। কিন্তু বইটি প্রকাশ হয়নি। 
হালিমা বলেন, আর্নল্ডের কাছে যথেষ্ট অর্থ ছিল। সবই তার এক বন্ধু নষ্ট করেছে। আমাকেও ওনার কাছে অবিশ্বাসী করে রাখত তাই। জমি কিনে রাখার বিষয়টি কখনো বোঝাতে পারিনি। তাই এখন বাসা ভাড়া করে থাকাতে হচ্ছে। তিনি ছবি এঁকে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ২০১১ সালে আর্নল্ডের প্রথম স্ট্রোক হয়। এরপর সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। কোভিডের কারণে তার ছবি বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এখন সংসার চালানো আর তার চিকিৎসায় সমস্যা হচ্ছে। 
জানা গেছে, কোভিডের মধ্যে কয়েকজন ব্যক্তি সাধ্য অনুযায়ী সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন বাংলাদেশপ্রেমী এই অস্ট্রেলীয়র প্রতি। তখন একসঙ্গে চার মাসের ঘর ভাড়াও পরিশোধ করা হয়েছিল। এখন খাবার, বাড়ি ভাড়া এবং ওষুধপত্র ও চিকিৎসা করানো এই দম্পতির জন্য কঠিন। বর্তমানে তারা খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকার মাদ্রাসাগলির ভাড়া বাড়িতে থাকেন।

2022-04-30 02:11:27

2022-04-29 16:11:27

Published
Categorized as 16

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *