ভালোবাসার জবাব ভালোবাসা দিয়ে দিতে হয়।

মিষ্টি কে নিয়ে নিউ মার্কেটের নিচতলায় ব্যাগের দোকান গুলোতে স্কুল ব্যাগ দেখছিলাম। মিষ্টির আজ জন্মদিন। ও খুব বায়না ধরল, চলোনা না মামনি, নিউ মার্কেটে যাই। দুজন মিলে আজকে ইচ্ছে মতো ঘুরবো, ফুচকা খাবো। তারপর তুমি আমাকে সুন্দর দেখে একটা স্কুল ব্যাগ কিনে দিবে। আমারব্যাগটা দেখতে খুব পচা হয়ে গেছে।

আসার সময় একটা বড়ো দেখে কেক কিনে বাসায় আসব। রাতে বাবার সাথে বসে একসাথে কেক কাটবো। খুব মজা হবে তাই না মামনি?

পাগল মেয়েটাকে কেমন করে বোঝাই, মাসের শেষে চাকরিজীবীদের হাতে তেমন টাকা পয়সা থাকেনা। একজনের আয়ে ঢাকা শহরে চলা মুশকিল। আমার নিজের কিছু জমানো টাকা ছিল। মেয়েটা মন খারাপ করবে, একটা আব্দার করেছে।
তাই জমানো টাকাগুলো নিয়ে মা মেয়ে চলে আসলাম নিউমার্কেটে। আমি খুবই ব্যস্ত হয়ে ব্যাগ দেখছি, আমার যেটা পছন্দ হয়, মিষ্টির সেটা পছন্দ হয় না।

আবার মিষ্টি যেগুলো পছন্দ করে, অনেক বেশি দামি। এতো দামি ব্যাগ কিনে দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। আবার মুখ ফুটে কিছু বলতে ও পারছি না। এমন বিশেষ একটা দিনে, মেয়েটার মন খারাপ করে দিতে ইচ্ছে করছে না।
নিজের কাছে খুব অসহায় লাগছে নিজেকে।

ঠিক সেই সময় পেছন থেকে কেউ একজন ডেকে উঠলো, রিমি না? আমি চমকে পেছন ফিরে তাকালাম । এত বছর পর অর্ককে দেখে আমি একটা ধাক্কার মত খেলাম। এভাবে অসময়ে অর্ককে এখানে দেখবো, ভাবতেও পারিনি।অর্ককে আগের চাইতে অনেক বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে। চোখ ফিরিয়ে নিতে পারছিলাম না।

নিজেকে সামলে নিলাম। কেমন আছো অর্ক?
অনেক বছর পর তোমার সাথে দেখা হল।

হুম তা ঠিক।তাওতো প্রায় আট দশ বছর হবে। তারপর তোমার খবর কি, কেমন আছো?
তোমার সাথে পরীর মত ফুটফুটে মেয়েটা কে?

ও মিষ্টি, আমাদের একমাত্র কন্যা।
মিষ্টি এটা তোমার অর্ক মামা, সালাম দাও।

আস সালামুআলাইকুম আঙ্কেল।

ওয়া আলাইকুমুস সালাম।অর্ক মিষ্টির সাথে খুব সহজেই মিশে গেল।

তারপর মিষ্টি কেমন আছো?
মনে হচ্ছে স্কুল ব্যাগ খুঁজছিলে?

জ্বী আঙ্কেল, আজকে আমার বার্থ ডে।তাই মামনি আমাকে অনেক সুন্দর দেখে একটা স্কুল ব্যাগ কিনে দিবে।

আমি হালখা ধমক দিলাম,আহ্ মিষ্টি,কি হচ্ছে!

রিমি একদম চুপ আমাদের মামা-ভাগ্নির কথার মধ্যে তুমি ঢুকবে না।

এসো মিষ্টি আজকে স্কুল ব্যাগটা আমি তোমাকে কিনা দিবো, তুমি পছন্দ করো এটা আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য একটা জন্মদিনের গিফট।

ব্যাপারটা আমি পছন্দ না করলেও অর্ক খুব সুন্দর দেখে একটা ব্যাগ গিফট করলো। সেখানেই সে থামলো না। আমার খুব অসস্তি হচ্ছে বুঝতে পেরেও, একরকম জোর করে আমাদেরকে একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে নিয়ে বসাল।

আমি কোন ভাবেই সহজ হতে পারছিলাম না। একটু একটু যেন ঘামছি। অথচ মিষ্টি ননষ্টপ কথা বলেই যাচ্ছে!

মেয়েটা এত কথা বলতে পারে। এক সেকেন্ডের জন্য স্থির থাকতে পারে না। এত অল্প সময়ের মধ্যে দুজনের কি ভাব হয়ে গেছে। খাবারের অর্ডার দিয়ে অর্ক মজার মজার গল্প করছে,আর মিষ্টি হেসে গড়িয়ে পড়ছে। ওদের কোন কথাই আমার কান দিয়ে ঢুকছে না।
আমি হারিয়ে গেলাম কিছুটা সময়ের জন্য ভার্সিটির সেই সুন্দর দিনগুলোতে।

দুর্দান্ত রকমের ভালো ছাত্র ছিল অর্ক। আমরা একসাথে পড়তাম একি ডিপার্টমেন্ট এ।
অর্কর চেহারার মধ্যে এক ধরনের আকর্ষণ আছে, যা যেকোনো মেয়েকে আকর্ষিত করে।
আমি ও প্রথম দেখাতেই অর্কর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম।তবে অন্য মেয়েরা যেভাবে গায়ে পরে অর্কর সাথে মিশত,প্রেম নিবেদন করতো, আমি ছিলাম তার ব্যাতিক্রম। কখনো বুঝতেই দিতাম না, ওর প্রতি আমার দুর্বলতা।

আর এই পাত্তা না দেওয়াটাই ছিল আমার প্রতি অর্কর আকর্ষিত হওয়ার মূল কারণ।
একটা সময় বন্ধুবান্ধবদের মাঝে আলোচনার মূল বিষয় ছিল আমাদের প্রেম। অর্ক কে ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব,এটা আমি কল্পনা ও করতে পারতাম না।সেই সময় ভার্সিটিতে সবচেয়ে আলোচিত জুটি ছিলাম আমরা দুজন।

অথচ মামা মামি যখন আমার বিয়ে ঠিক করলো, আমি মুখ ফুটে আমার পছন্দের কথাটা বলতেও পারলাম না। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার পড়াশোনার খরচটা মামা দিচ্ছে। আমাদের সংসারে যে কোন ডিসিশন নেয় মামা।মামার মুখের ওপরে কথা বলার সাহস আমাদের কারো নেই।

সেদিন সারা রাত ঘুমোতে পারলামনা। সকালে ভার্সিটিতে যেয়েই অর্ককে খুঁজে বের করলাম।
আমার এমন উস্কো খুস্কো চেহারা দেখে ও খুব ভয় পেয়ে গেলো।
কি হয়েছে তোমার রিমি?রাতে ঘুমাওনি?

অর্ক চলো আমরা পালিয়ে অনেক দূরে কোথাও চলে যাই। যেখানে আমাদের কেউ খুঁজে পাবে না।

আরে পাগল পালাবো কেন?
কি হয়েছে খুলে বলবেতো।

অর্ক মামা মামী আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। আমাকে তুমি বাঁচাও। আমাকে তুমি লুকিয়ে রাখো।
প্লিজ অর্ক প্লিজ।

সবকিছু শুনে অর্কর মুখ অন্ধকার হয়ে গেল। চেহারা করুন করে বললো,
রিমি বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে সত্যিই খুব ভালোবাসি। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি একটা বেকার ছেলে, পড়াশোনা শেষ হয়নি। আমার মনে হয় পরিবারের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া তোমার জন্য ভালো।
আর নয়তো আমাকে সময় দিতে হবে, তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে বেশ কিছু বছর।

আমি আকুল হয়ে বললাম, চলো না আমরা পালিয়ে বিয়ে করে ফেলি।

সেটা হয় না রিমি। আমাদের টানাটানির সংসারে তোমাকে কি খাওয়াবো?
তুমি জানো আমি টিউশনি করে নিজের খরচ চালাই।

আমি তখন চোখেমুখে অন্ধকার দেখছিলাম।গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছে না।গলার কাছে সব কষ্টগুলো দলা পাকিয়ে উঠছে।
চোখ মুছে বললাম, তাহলে তুমি আমাকে বিয়ে করছো না?

অর্ক মাথা নিচু করে বসে রইল।

কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই আমি হনহন করে হেঁটে চলে গেলাম অর্কর সামনে থেকে। একবার ও পিছু ফিরে তাকালাম না। আমার কানে অর্কর মিনতি ভরা সুর ভাসছিল।

রিমি দাঁড়াও, কোথায় যাচ্ছো?
আমাকে এভাবে ভুল বুঝো চলে যেও না প্লিজ।

সেটাই ছিল অর্কের সাথে আমার শেষ দেখা।

অর্কর ডাকে আমার সম্বিত ফিরে এলো।
খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে,এই রিমি কি ভাবছো এতো?

না কিছু না। তারপর তোমার খবর কি?
কি করছো,বেবি কয়জন?

অর্ক সেই আগের মতই মিষ্টি হেসে বললো, রিমি আমি অস্ট্রেলিয়ায় সেটেল্ড। আমাদের কোন বেবি নেই। সুস্মিতা নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে মহাব্যস্ত।ও চাইছে না এখন মা হতে।
বাদ দাও। তোমার কথা বলো।মা অসুস্থ তাই দেখতে এসেছিলাম। কালকে আমার ফ্লাইট।
যাওয়ার আগে তোমার সাথে এভাবে দেখা হবে ভাবতে ও পারিনি।যখনি দেশে আসি, মনে মনে শুধু তোমাকে খুঁজে বেড়াই। আমার বিশ্বাস ছিল একদিন না একদিন তোমার সাথে আমার ঠিক দেখা হবেই।
কিন্তু সেটা এভাবে।ভাবতেও পারিনি।
ভাগ্যিস টুকটাক কেনাকাটা করতে নিউ মার্কেটে এসেছিলাম। নিজেকে আজ বড্ড ভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছে।

আমি খুব আস্তে করে বললাম, দেখা না হলেই বোধহয় ভালো হতো।

কিছু বললে?

না কিছু না।
আমরা উঠি।

উঠার কথা শুনে অর্ক যেন আকাশ থেকে পড়ল।উঠবে মানে?
এখন মিষ্টি কেক কাটবে।
বলার আগেই ওয়েটার কেক এনে হাজির।

এত বড় একটা কেক দেখে মিষ্টি এতটাই আনন্দিত যে, আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না।
বাঙালি চরিত্র অধিকাংশ সময় তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করে। নিবিড় করে পাওয়ার সুখ আমরা নিতে জানি না বললেই চলে। অথচ আমাদের আকাঙ্ক্ষার কোন শেষ নেই।

আমি খুব চেষ্টা করছি, অর্কর দিক থেকে চোখ সরিয়ে রাখতে, মনকে স্বাভাবিক রাখতে।নিজের মনের সাথে প্রচন্ড যুদ্ধ চলতে থাকলো ।
ভুলে যাওয়া এক কথা, আর ভুলবার চেষ্টা করা আরেক কথা।
এভাবে হুট করে অর্কর সাথে দেখা হওয়া, এবং সময়টাকে এত সুন্দর করে আনন্দময় করে তোলার জন্য, অর্কর প্রতি আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ। এতো দিন পর আবার নতুন করে উপলব্ধি করলাম ওর প্রতি আমার মনের গহীনে অনেক ক্ষোভ জমা থাকলেও ভালোবাসা একটুও কমে নাই।এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, আমার ভালো লাগা আর ভালোবাসা গুলো কুয়াশার চাদরের মত চারদিক আড়াল করে দিচ্ছে।

মিষ্টি কেক কাটার সময় আনন্দে ওর মুখ ঝলমল করছিল। আশপাশের টেবিলের সবাই খুব উপভোগ করছিলো ব্যাপারটা। সবাই নিজের থেকে এসে উইশ করলো, মিষ্টি মহাখুশি। মেয়ের খুশি দেখে আমি ও খুশি।কারণ আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি আমাদের মা মেয়ের জন্য এতো সুন্দর একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিল।

অর্ক অনেক খাবার অর্ডার করেছিল,যার অর্ধেক ও আমরা খেতে পারি নি।অর্কর কথামতো সব খাবার গুলো ওয়েটার সুন্দর করে প্যাক করে দিল।

এতো কিছু করার পরও অর্ককে থামানো গেল না। নিচে নেমে সে খুব ভালো কিছু চকলেটের বক্স কিনলো।

আমি যতোই না করি কোন কথাই শুনতে চায় না।
যদিও অর্ক আমাদের মা-মেয়ে দুজনের আজকের এই দিনটাকে অনেক বেশী আনন্দময় করে তুলেছে, তারপরও মনের মধ্যে এক ধরনের চাপা অসস্তি হচ্ছে। অভদ্রতা যেখানে অসম্ভব ,খুশি যেখানে চেষ্টা করেও হওয়া যায় না, সেখানে অসস্তি ছাড়া আর কিইবা হতে পারে।

রিমি কিছু মনে না করলে তোমার কন্টাক নাম্বারটা কি দেওয়া যাবে?

আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, আমিতো মোবাইল ইউজ করিনা।
সরি অর্ক আমার কোন নাম্বার নেই।

মিষ্টি খুব অবাক চাহনি নিয়ে আমার দিকে তাকালো।
আমি ইচ্ছে করেই আমার নাম্বার টা দিলাম না। আমি চাই না নতুন করে আবার অর্ক আমার জীবনে ফিরে আসুক।

ইটস ওকে,নো প্রবলেম।এটা আমার নাম্বার, কার্ডটা রেখে দাও। কখনো যদি কোন কারনে আমাকে প্রয়োজন হয়, আমাকে ফোন করতে কোন রকম সংকোচ করবে না।
নিঃসংকোচে সাথে সাথে আমাকে ফোন দিবে। তোমার জন্য বন্ধুত্বের দরজা সব সময় খোলা।

ঠিক আছে আসি অর্ক, ভালো থেকো। বিদায় মুহুর্তের সময় আমি খেয়াল করলাম, মিষ্টির মনটা বেশ খারাপ। আমি পাত্তা না দিয়ে একটা রিকশা নিলাম। আমি জানি অর্ক এখনো আমাদের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আমি আর পেছনে ফিরে তাকালাম না। শুধু শুধু মায়া বাড়িয়ে লাভ কি।

শফিক অফিস থেকে ফেরা মাত্র মিষ্টির কথার ফুলঝুরি ছুটল। চোখ মুখ থেকে আনন্দ ছিটকে বেরোচ্ছে।মেয়েটা খুব আগ্রহ করে সব খাবার গরম করে বাবাকে পাশে বসে খাওয়ালো।আর মুখ তো চলছেই।

শফিকের সাথে আমার ইদানিং বেশ দূরত্ব তৈরি হয়েছে।ও আমাকে একবারো জিজ্ঞেস করল না,অর্ক কে?
অথচ সেই বিকেল থেকে আমার মস্তিষ্ক এক মুহুর্তের জন্য নিস্ক্রিয় ছিল না, একটাই ভাবনা কুরেকুরে খাচ্ছিল, শফিক যখন জানতে চাইবে ওর সাথে তোমার সম্পর্ক কি? কেন এতো টাকা খরচ করলো তোমাদের পেছনে?
আমি কি জবাব দেবো।

বাপ মেয়ে শোয়ার আয়োজন করছে, সেই ফাঁকে আমি খাবার গুলো গুছিয়ে ফেলছি। কিন্তু মনটা বার বার হারিয়ে যাচ্ছে অন্য জগতে।

পৃথিবী থেকে প্রিয়তম মানুষ অকস্মাৎ দূরে সরে গেলে যে অন্ধকার নেমে আসে, তার স্থায়িত্ব কতটুকু? কারো কারো হয়তো খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তা দূর হতে শুরু করে,আর কেউ কেউ হয়তো সারাজীবন মনের আনাচে কানাচে তাকে আঁকড়ে ধরে থাকে । তবু যেকোন চলে যাওয়া মানেই পানির মধ্যে গর্ত খোঁড়া,যা পর মুহূর্তেই জলরাশির ঢেউয়ে বুজে যায়। বেঁচে থাকার নিয়মে সেটিই শেষ সত্যি হয়ে দাঁড়ায়। হায়রে ভালোবাসা!
যাকে একটি মানুষ মন প্রান উজাড় করে বিশ্বাস করে, ভালোবাসে, নিজের জীবনে ধরে রাখে,তার আয়ু কতোটুকু?
আমরা এমন এক মানুষ জাতি,আমরা সহজেই সবকিছু ভুলে যেতে বড্ডো ভালোবাসি!

মিষ্টি ঘুমে কাদা কাদা। কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে,চাদরটা ঠিক করে লাইট নিভিয়ে দিয়ে নিজের রুমে এসে দেখি সফিক এখনো জেগে আছে।অন্য দিনগুলোতে এসে দেখি ঘুমিয়ে গেছে,আজ এখানো জেগে আছে কেন বুঝলাম না। বুকের মধ্যে অজানা এক আশংকা ঢিপঢিপ করতে লাগল।

আমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল বাঁধছি,ও পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমাকে একটা বেলি ফুলের মালা দিল, কতো বছর পর বেলি ফুলের মালা পেয়ে আনন্দের চোখে পানি চলে আসলো। মিষ্টি হওয়ার আগে প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পথে একটা বেলি ফুলের মালা নিয়ে আসতো।

ছোট ছোট দুঃখ তো থাকবেই তবু সবকিছু ছাড়িয়ে আমাদের চারদিকে গভীর একটা আনন্দ আছে ।এটা সব সময় ধরা পড়ে না ।
গভীর নীল আনন্দে আমার চোখ ভিজে উঠলো।

এই মেয়ে চোখের পানি মুছো। আমার ভুল হয়েছে এখন থেকে আবার সেই আগের মত তোমাকে সময় দিব, প্রতিদিন একটা মালা মনে করে নিয়ে আসবো, প্রমিজ।

এখন বলোতো এই মহান ব্যক্তিটি কে? আমার মেয়েকে এত সুন্দর সুন্দর গিফট করলো, তিতলি তো মামা মামা করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলল।

আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। হুট করে বলে ফেললাম আমার আত্মীয়।
দেখলাম ওর মুখটা বেশ স্বাভাবিক, কোনো রিয়্যাকশন নেই।

“আত্মীয়” এই বাংলা শব্দ টার কাছে আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ।
আত্মীয় শব্দটি ঠিক আকাশের মতো। কোনো গন্ডিতে আটকানো যায় না।রক্তের সম্পর্ক হোক বা আত্মার সম্পর্ক হোক,এই একটি শব্দ কি সুন্দর করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।

আমি ওকে জড়িয়ে ধরে গভীর করে একটা চুমু দিলাম,আমার কাছে মনে হয় ভালোবাসার জবার ভালোবাসা দিয়েই দিতে হয়।

ভালোবাসার জবাব ভালোবাসা দিয়ে দিতে হয়।

রোকেয়া পপি
বাংলাদেশ

2021-03-07 16:17:13

2021-03-07 05:17:13

Published
Categorized as 52

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *