৩৩ লাখ কিলোমিটার দেশ ভারতের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে ৬টি দেশের। কিন্তু হত্যাযজ্ঞ চলে শুধু বাংলাদেশ সীমান্তেই। এমনকি বাংলাদেশের এই বন্ধুরাষ্ট্রটির চিরশত্রু পাকিস্তানের সীমান্তেও এমন হত্যাযজ্ঞ হয় না। এছাড়া চীন, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার সীমান্তেও এমন হত্যার ঘটনা প্রায় শূন্য।
সম্প্রতি সীমান্ত নিয়ে ভারতের সঙ্গে তাদের প্রায় যুদ্ধাবস্থা। পাকিস্তানের সঙ্গেও প্রায় একই অবস্থা। আর নেপাল তো ভারতের ভূখন্ড নিয়ে মানচিত্রই বদলে দিয়েছে। বাকি শুধু রাজত্ব রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তে।
বারবার আশ্বাসের পরও বাংলাদেশ সীমান্তে থামছে না ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ’র হত্যাকাণ্ড। বেড়েই চলেছে এই একপেশী হত্যা। প্রতিবেশি এই দেশটির সীমান্তরক্ষীর হাতে গত বছর রেকর্ড পরিমাণ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আর চলতি বছরের শুরুতেই এই হত্যাযজ্ঞ আশঙ্কা হারে বেড়েছে।
গত ৬ মাসে সীমান্তে বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। বেসরকারি সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বলছে, ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) সীমান্তে ২৫ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২১ জনই নিহত হয়েছেন বিএসএফের গুলিতে।
সংগঠনটি দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তারা এই রিপোর্ট তৈরি করেছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে বিএসএফের গুলিতে ১৮ জন বাংলাদেশি নিহত হন। এ ছাড়া ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের নির্যাতনে দুই জনের মৃত্যু হয়। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সীমান্ত হত্যার সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছিল।
আসকের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে বিএসএফের হাতে ৪৩ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৩৭ জনই গুলিতে প্রাণ হারান। বাকি ৬ জন নির্যাতনে মারা যান। অথচ আগের বছর (২০১৮) এ সংখ্যা ছিল ১৪ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন সীমান্তে।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ২০০৯ সালে বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে ৬৬ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ২০১০ সালে ৫৫ জন, ২০১১ ও ২০১২ সালে ২৪ জন করে, ২০১৩ সালে ১৮ জন, ২০১৪ সালে ২৪ জন, ২০১৫ সালে ৩৮ জন, ২০১৬ সালে ২৫ জন, ২০১৭ সালে ১৭ জন নিহত হন।
অবশ্য ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িতরা সীমান্তে ভারতীয় রক্ষীদের ওপর আক্রমণ করলেই কেবল প্রাণ বাঁচানোর স্বার্থে গুলি চালানো হয়।
মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ অনেক আগে থেকেই বলে আসছেপ্রতিটি ঘটনাতেই নিরস্ত্র বাংলাদেশিরা নিহত হয়েছেন। বিএসএফের গুলিতে যখনই কোনো বাংলাদেশি নিহত হয় তখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাকে গরু চোরাচালানকারী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা দেখা যায়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার অনেক মানুষের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।
সংগঠনটির অভিযোগ- গরু চোরাচালানের সাথে ভারতীয়রা জড়িত থাকলেও গুলিতে কেবল বাংলাদেশিরাই নিহত হচ্ছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, আত্মরক্ষার জন্য বিএসএফ-র দিক থেকে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয় সেটি যৌক্তিক নয়। সীমান্তে প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার সম্পর্কে বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও বিএসএফ সেটিকে মোটেই গুরুত্ব দিচ্ছে না। বিশ্বাসযোগ্য অজুহাত ছাড়া তারা প্রায়ই বলে আত্নরক্ষার্থে তাদের গুলি করতে হয়।
বেসামরিক মানুষকে মোকাবেলার জন্য যদি গুলি করতেও হয় তাহলে এমন জায়গায় সেটি করতে হবে যাতে প্রাণহানি না হয় বলেও মন্তব্য তাদের।
/প্রা নি/বিডি
2021-05-04 16:18:30
2021-05-04 23:18:30