বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত, দেশে তাঁর চিকিৎসা সম্ভব না : চিকিৎসক

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই রয়েছে। কেবিনে স্থানান্তরের পর থেকে বড় ধরনের রক্তক্ষরণ হয়নি। তবে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তাকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বেগম জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। 
শনিবার (২২ জানুয়ারি) দুুপুরে তিনি বলেন, বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই রয়েছে। গতকাল সকালে তাঁর বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়েছে। ৮ জানুয়ারি কেবিনে স্থানান্তরের পর বড় ধরনের কোনো রক্তক্ষরণ হয়নি। প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে বাংলাদেশে তাঁর সুচিকিৎসা হচ্ছে না। তাই যেকোনো সময় আবার তাঁর রক্তক্ষরণ হতে পারে। 
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনা বাড়ার কারণে হাসপাতালে রেখে ম্যাডামের চিকিৎসা নিয়ে আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। তবে তাঁর যে অবস্থা বাসায় রেখে চিকিৎসা দেয়াটাও কঠিন হয়ে যাবে। সার্বিক বিষয়ে মেডিকেল বোর্ড বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে এখনো চিকিৎসা সম্পূর্ণ না হওয়ায় বাসায় ফিরতে সময় লাগবে। আরও কিছুদিন হাসপাতালে থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। 
বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত। তাঁর যে বড় সমস্যা শারীরিক রক্তক্ষরণ, সেটি গত ১৫ দিন যাবত বন্ধ আছে। এছাড়া ডায়াবেটিস, কিডনি-লিভারের যেসব সমস্যা ছিল, সেগুলোও এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু তিনি সম্পূর্ণভাবে সুস্থ সেটা বলা যাবে না, আবার দেশে তাঁর সব চিকিৎসা শেষ হয়ে গেছে সেটাও না। এটা ঠিক যে, দেশে চিকিৎসা দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ করা সম্ভব নয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তার বিদেশ যাওয়া অপরিহার্য। 
তিনি আরও বলেন, ম্যাডামকে দেশের বাইরে নিয়ে যত দ্রুত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে, ততই তার শরীরের জন্য মঙ্গল। দেশে যে  চিকিৎসা দেয়া সম্ভব তা দেয়া হয়েছে। তাঁর সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে উন্নত সেন্টারে চিকিৎসা দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। এখন কেউ যেতে না দিলে আমাদের কিছুই করার নেই। 
সংশ্নিষ্ট চিকিৎসকরা জানান, গত ১৫ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার গৃহকর্মী ফাতেমা করোনায় আক্রান্ত হন। তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনা ব্লকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সে সুস্থ রয়েছে। ফাতেমা করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়ারও করোনার নমুনা নেয়া হয়। সেখানে তার ফলাফল নেগেটিভ আসে। 
এদিকে আপাতত রক্তক্ষরণ বন্ধ হলেও বেগম খালেদা জিয়া ঝুঁকিমুক্ত হননি। শারীরিক দুর্বলতা এখনও অনেক। খাবারে অরুচি রয়েছে। কারও সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। আর যে কোনো সময় ফের নতুন বা পুরোনো উৎস থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে। তাই দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নেয়া দরকার। 
বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তাঁর পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান শিথি গত ১৬ জানুয়ারি লন্ডনে চলে গেছেন। এখন বিএনপি নেত্রীর জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের পাশাপাশি তার বিশেষ সহকারী শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ অন্যরা নিয়মিত তাঁর খোঁজখবর রাখছেন। তবে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পরিবার কিংবা দলের নেতাদের সাক্ষাতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। 
উল্লেখ্য, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়াকে গত ১৩ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এভারকেয়ারের চিকিৎসক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি মেডিকেল টিম তাঁকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। ৭৭ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস ছাড়াও অনেক বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
বেগম খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, দেশে করোনা বাড়ার কারণে (বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে) ডাক্তাররা হাসপাতালে যেতে নিষেধ করেছেন। এছাড়া হাসপাতালে অনেক করোনা রোগী থাকায় তাঁকে (খালেদা জিয়া) কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তিনি তো হাসপাতালে থাকতে চান না। কিন্তু চিকিৎসা সম্পূর্ণ না করে বাসায় আনলে তো আবারও হাসপাতালে নিতে হয়। বারেবারে নেয়া-আনা খুব অসুবিধা। ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডামকে বাসায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না আমার জানা নেই।  

2022-04-09 16:36:18

2022-04-09 06:36:18

Published
Categorized as 17

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *