বিশ্বের সামরিক শক্তির দিক থেকে আগামী দশক হবে শ্রেষ্ঠ মুসলিম দেশ গুলো

বর্তমান বিশ্বে মোট মুসলিম রাষ্ট্র- ৬৫ টি আর OIC ভুক্ত মুসলিম রাষ্ট্র- ৫৭ টি, সর্বশেষ স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র- কসোভা, (ইউরোপ) সব মিলিয়ে ৬৫ টি মুসলিম দেশ।

সামরিক শক্তিতে বিশ্বের কোন কোন দেশ কত নম্বরে অবস্থান করে সে তালিকা প্রতি বছর প্রকাশ করে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার (জিএফপি)। তাদের মতে সামরিক শক্তিতে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে রাশিয়া। অন্যদিকে, তৃতীয় চীন ও চতুর্থ স্থানে তথাকথিত ভারত।

সেরা ১০ এর তালিকায় ৯ নম্বরে অবস্থান করছে মুসলিম প্রধান দেশ মিশর। সে হিসেবে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মুসলিম সামরিক শক্তিধর দেশ হিসেবেই বরাবরের মত প্রাধান্য ধরে রেখেছে দেশটি। অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ১১তম অবস্থানে আছে তুরস্ক।

সামরিক শক্তিতে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকা এছাড়া ১৪, ১৫ এবং ১৬ নম্বরে অবস্থান করছে যথাক্রমে ইরান, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া। ১৭ নাম্বারে অবস্থান করছে সৌদি আরব। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এ বছর ৪৬ নাম্বারে।

বিস্তারিত:
সামরিক শক্তির তালিকা দিয়ে তো মাঠের আসল খেলা যায় না।খেলতে হলে দরকার সামরিক বুদ্ধিমাত্তা, কৌশল। সেই সাথে দরকার দক্ষ জনবল। বর্তমানে এবং ভবিষ্যৎ মিশেলে প্রযুক্তি নির্ভর সামরিক অস্ত্র। বিশাল ৫০ চাকার গাড়ির দিয়ে এখন কেউ চায়না তাদের সামরিক যন্ত্রাংশ বহন করে।কারন এগুলো খুবই ব্যয়বহুল এবং রক্ষণাবেক্ষণে প্রচুর অর্থ, সময় ব্যয় হয়।এসব ব্যয়বহুল সামরিক অস্ত্রসস্ত্র অধিকাংশ সময় উপযোগী করে ব্যবহার করা যায় না।

তাই বর্তমান বড় বড় শীর্ষ সামরিক শক্তিধর দেশগুলো তাদের সামরিক অস্ত্রসস্ত্রগুলোর স্মার্ট করছে। এখন সামরিক শক্তিধর দেশগুলো বিশেষ করে ড্রোন ব্যবস্থাকে আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক টেকনোলোজিতে কনভার্ট করছে।

সে যা হোক বিশ্বের শীর্ষ সামরিক শক্তিগুলো সবচেয়ে বড় ক্রেতা হলো মুসলিম দেশগুলো। কারন মুসলিম দেশগুলোকে মহান আল্লাহ ধন সম্পদে ভরপুর করে দিয়েছে। যার জন্য প্রতিটা সামরিক শক্তি দেশগুলোর নজর হলো কিভাবে মুসলিম দেশগুলোকে ঘায়েল করে মুসলিমদের সম্পদ নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নেওয়া যায়।

তাই এই তথাকথিত সামরিক শক্তির দেশগুলো একে একে মুসলিম দেশগুলোর মাঝে শত্রুতার বীজ জন্ম দেয়। যার জন্য মুসলিম দেশগুলোর মাঝে অবিশ্বাস, বৈরিতা দেখা দেয়।ফলে সময়টা তখন কোন মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অনুকূলে ছিলো না। থাকবে কী করে! মুসলিম বিশ্বে ঐক্য অধরা। অভ্যন্তরীণ কোন্দল, হানাহানি, বিভেদ প্রকট, খিলাফত হারিয়ে মুসলিম বিশ্ব পথহারা হয়ে পড়ে।

এক মুসলিম দেশের সঙ্গে আরেক মুসলিম দেশের সাথে সংঘাত বেড়েছে চলছিল। হচ্ছিল রক্তপাত। কিন্তু ক্ষতিটা হচ্ছে মুসলমানেরই। রক্ত ঝরলে তা কোনো না কোনো মুসলমানেরই ঝরছে। মুসলিম বিশ্বের এই ক্রান্তিকালে ইজরাইল রাষ্ট জন্ম নেয় মুসলিমদের বুকে। দখলে চলে যায় মুসলিমদের প্রথম কেবলা বায়তুল মুকাদ্দিস।

এর মধ্যে আরব দেশগুলো উপসাগরীয় বিভিন্ন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ফলে লক্ষ লক্ষ লোক নিহত,আহত,বাস্তুহারা হয়ে দেশান্তরীত হয়ে পড়ে। মুসলিমদের জন্য পৃথিবীটাকে উম্মক্ত কারাগারে পরিনত করে দেয় এসব ক্রুসেডদের সামরিক শক্তির দেশগুলো।

মুসলিমদের ক্রান্তিকালে নেতৃত্বের সংকট এতটাই স্পষ্ট করে তোলে যে Do or Die। এর মধ্যে মুসলিমদেশ পাকিস্তান পারমানবিক বোমার শক্তির দেশ হলেও কি হবে। ক্রুসেডেরা পাকিস্থানের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রাষ্টপ্রধান ও জনগনের মধ্যে অবিশ্বাসের জন্ম দেয়।আর সৌদিআরব, ইরানের মাঝে কৌশলে যুদ্ধভিত্তিক পরিবেশ তৈরি করে।

এর মধ্যে যারা মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে বাদশা ফয়সালের মত করে গোপনে এবং প্রকাশ্যে হত্যা করে নেতৃত্ব ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এই ক্রুসেডেরা যে কত মুসলিম বিজ্ঞানী, ডাক্তার, রাষ্টপ্রধান, রাজনীতিবিদের হত্যা করছে তার হিসাব নেই।

এসবের মাঝে এসব বিশ্ব সামরিক শীর্ষ দেশগুলো তাদের অস্ত্রের পরীক্ষা নিরিক্ষার, বিক্রির আসল কেন্দ্রবিন্দু পরিনত হয় মুসলিম দেশগুলো। কারন মুসলিম দেশগুলোর মাঝে নেই বিশ্বাস,অভ্যন্তরীণ কোন্দলে একে অপরের চরম শক্রতে পরিনত হয়। মুসলিম দেশগুলো হয়ে পড়ে এসব শীর্ষ সামরিক দেশগুলোর সোনার ডিম পাড়া হাঁসে। কিংবা দুধ দেওয়া গরুতে।

বর্তমানে শীর্ষ সামরিক দেশগুলোর অস্ত্র ক্রয়ের প্রধান ক্রেতা হলো মুসলিম দেশগুলো। OIC ভুক্ত মুসলিম রাষ্ট্র- ৫৭ টি মুসলিম দেশ কোন না কোন ভাবে সামরিক শক্তিধর দেশগুলোর থেকে দেশ রক্ষায় আধুনিক এবং অত্যাধুনিক স্মার্ট অস্ত্রসস্ত্র ক্রয় করে নিচ্ছে। সেই সাথে অস্ত্র তৈরি টেকনিক্যাল কৌশল হাতিয়ে নিজেরাই অত্যাধুনিক অস্ত্র বানাচ্ছে। যা অনেক ক্ষেত্রে শীর্ষ সামরিক দেশগুলোকে পাত্তা দিচ্ছে না।

বিশেষ করে মধ্যপ্রাচের সব কয়টি মুসলিম দেশগুলো নিজেদের মধ্যে যতই কোন্দল থাকুক না কেন। সবাই একে একে নিজেদের সামরিক শক্তিতে শক্তিশালী করে নিচ্ছে। হোক সেটা প্রতিবেশী মুসলিম দেশগুলোর মাঝে দ্বন্দ্বের ফসল।

আর এই সুযোগটাকে সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যবহার করছে তুরস্ক।সামরিক দিক থেকে শীর্ষ ৯ থাকা মিশরের চেয়ে রাঙ্কিকে ১১ তম অবস্থা রয়েছে তুরস্ক। আর তুরস্ক ১১ তম অবস্থা থাকা সেটা বিষয় না। বিষয়টা হলো তুরস্ক নিজেরাই এখন নিজেদের প্রয়োজনীয় অধিকাংশ সামরিক অস্ত্রসস্ত্রসহ অন্যান্য অস্ত্র বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে।

যেমন ধরুন তুর্কী ড্রোন বিপ্লব শিল্প। সুলতান এরদোগানের নেতৃত্বে গুনে এই শিল্পকে সাফল্যের চরম শিকড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যার পিছনে সুলতান এরদোগানের ছোট মেয়ে সুমাইয়ার জামাতা ড্রোন বিজ্ঞানী সেলজুক বায়রাকতারের সীমাহীন পরিশ্রম।যার হাত ধরে তুর্কীরা এখন বিশ্বকে দেখিয়ে দিচ্ছে লিবিয়া,সিরিয়া যুদ্ধে ড্রোনের তিক্ত সাফল্য।

আর এখন বিশ্ব দেখছে আজারবাইজান আর আর্মেনিয়ার মধ্যকার যুদ্ধ। যেখানে ক্রুসেডার আর্মেনিয়া দীর্ঘ ৩০ বছর জোর করে নাগোর্নো-কারাবাখ দখলে রেয়েছে। যা আজারবাইজানের মোট আয়তনের ২০ ভাগ। এই দীর্ঘ ৩০ বছরে আজারবাইজান কোন ভাবে তার হাত থেকে দখলে চলে যাওয়া ভূ-খন্ড দখল বুঝে নিতে পারেনি।

ঠিক তখনি তুর্কী ড্রোনগুলো আজারবাইজানের জন্য শাপে বর হয়ে দেখা দিলো। এই ড্রোনের সামনে বিশ্বের সামরিক শক্তির দেশগুলোর মদদ পুষ্ট আর্মেনিয়ার কোন সামরিক অস্ত্র পাত্তা পাচ্ছে না।একে একে সব ধ্বংস করে দিয়েছে বায়রাকতারের ড্রোনগুলো।অন্যদিকে আজারবাইজান তাদের হারানো ভূ-খন্ড পুনরায় ফিরে পাওয়া শুরু করছে।

তেমনী কাতার, ইরান, পাকিস্থান, কুয়েত, ওমান, মিশর, সৌদিআরব, আরব আমিরাত সহ সকল মুসলিম রাষ্টগুলো বিভিন্ন সুযোগে সামরিক সাজ্জায় সজ্জিত হচ্ছে। তবে ইজরাইল কখনো চাইবে না মধ্যপ্রাচ্যের কোন মুসলিম দেশ সামরিক দিক শক্তিশালী হোক। ইজরাইলের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যতই চুক্তি আর টুক্তি করুক কোন লাভ নাই। কারন আমেরিকার, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মান এসব রাষ্ট্র যতটা বুঝোক আর বুঝুক ইজরাইল ঠিক বুঝে মধ্যেপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী হলে। তা ইজরাইলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি।

কাতার এবং আমিরাত তারা আমেরিকার কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান চেয়েছে। তার আগে তুরস্ক চেয়েও পাইনি। একমাত্র ইজরাইলের কারনে। এখন কাতার, আমিরাত অথবা অন্যকোন মুসলিম রাষ্ট্র চাইলো এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পাবেনা। তুরস্ক, পাকিস্থান নিজেদের যৌথ উদ্যোগে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান তৈরি কাজ শুরু করছে। এই যুদ্ধ বিমান তৈরি হয়ে গেলে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের কোন প্রয়োজন হবে না। যেমনটা সেলজুক বায়রাকতারের ড্রোনের কাছে পাত্তা পাচ্ছেনা। ক্রুসেডদের ড্রোনগুলো। বায়রাকতার-টিবি টু ড্রোন,আকিঞ্জি ড্রোনগুলো বিশ্ব শক্তির গালে একের পর এক চপটাঘাত করছে।

ইরান তো নিজেরাই তো আবার আরেক ধাপ এগিয়ে রয়েছে।তাদেরকে বিশ্ব শক্তিধর দেশগুলো দীর্ঘদিন বিভিন্ন দিক থেকে অবরোধ দিয়ে রাখছে। এসব অবরোধ ইরানকে আরো শক্তিশালী করে নিয়েছে।

2021-01-30 06:29:31

0000-00-00 00:00:00

Published
Categorized as 17

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *