স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রাণবিনাশী প্রকল্প বন্ধ করে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নীতিমালা ও বরাদ্দ চাই
“করোনা ভাইরাস বা কোভিট-১৯ এর আক্রমণে যখন সারা বিশ্বই দিশেহারা, যখন বাংলাদেশের মানুষ চিকিৎসা, খাদ্য ও নিরাপত্তা সংকটে বিপর্যস্ত তখনও সরকার আগের ধারাতেই বাজেট পেশ করতে যাচ্ছে জেনে আমরা উদ্বিগ্ন। সরকার যখন ‘উন্নয়নের মহাসড়কে’ চলার দাবি করছেন তখন আমরা দেখছি সর্বজন হাসপাতালে দুরবস্থা, ডাক্তার নার্সের অভাব, সরঞ্জাম নেই, বাজেট নেই, পর্যাপ্ত শয্যা নেই, আইসিইউ হাতেগোণা। অনাহারে-অর্ধাহারে রয়েছে অসংখ্য মানুষ, বিনা চিকিৎসায় মানুষ মরছে। করোনা ভাইরাসের বৈশ্বিক সংকট স্পষ্ট করেছে যে, স্বাস্থ্যসেবা এবং খাদ্য নিরাপত্তাই হতে হবে উন্নয়নের প্রধান ভিত্তি। স্বাস্থ্যসেবা কোনোভাবে বেচাকেনার বিষয় হতে পারে না, ব্যক্তিগত মুনাফার ক্ষেত্র হতে পারে না। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিটি নাগরিকের অধিকার, রাষ্ট্রের দায়িত্ব সর্বজনের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা
অথচ উন্নয়নের নামে বিভিন্ন ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় দূষণকারী প্রকল্পের কারণে সারাদেশে দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, অসুস্থতা ও অকাল মৃত্যু বাড়ছে। ঢাকার বাতাস এখন বিশ্বে সবচাইতে বেশি দূষণের রেকর্ড করেছে; পানি ও বায়ু দূষণ বেড়ে যাওয়ায় শ্বাসকষ্ট, কিডনী-ফুসফুস-হৃদযন্ত্র জটিলতা সহ নানা অসুখ বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমছে মানুষের। তাই করোনা ছাড়াও দেশের অসংখ্য মানুষ অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে দিন পার করছেন। এর সমাধানের পথে না গিয়ে সরকার উল্টো বিপুল উৎসাহে একের পর এক কয়লা আর পারমাণবিক প্রকল্প করছে যার ভয়ংকর পরিণতি চিন্তা করাও কঠিন। প্রাথমিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ক্ষমার অযোগ্য ব্যর্থতা থাকলেও আরও ভয়াবহ বর্জ্য বান্ধব কয়লা ও পারমাণবিক কেন্দ্র ভিত্তিক ‘উন্নয়নের’ পথে যেতে সরকারের অতি উৎসাহ বিস্ময়কর।
গত অর্থবছরের বাজেটেও সরকার বিভিন্ন ব্যয়বহুল ক্ষতিকর বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দিয়েছিল। এই করোনাকালেও সরকার উন্নয়নের নামে এমন অনেক প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে যেগুলো দীর্ঘমেয়াদে দেশের জন্য শুধু আর্থিক বোঝাই সৃষ্টি করবে না, প্রাণ প্রকৃতি, সুন্দরবনের মত বিশ্ব সম্পদ বিনাশ করে দেশ ও জননিরাপত্তাকে আরও বিপর্যস্তও করবে, মানুষ ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকি ও দুর্যোগের মধ্যে পতিত হবে।
সম্প্রতি আমফান, বুলবুল আবারও দেখিয়েছে বাংলাদেশ রক্ষায় সুন্দরবন কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অথচ উন্নয়নের কথা বলেই সরকার সুন্দরবন বিনাশী রামপাল প্রকল্প অব্যাহত রেখেছে; আরও তিন শতাধিক, সুন্দরবন ও উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। সরকারী অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্যতম- উচ্চ ব্যয়বহুল এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প। সামনের বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না দিয়ে নানা প্রাণ ও প্রকৃতিবিনাশী গনবিরোধী প্রকল্পেই বড় বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে জেনে আমরা ক্ষুব্ধ।
রামপাল, রূপপুর, সহ অন্যসকল বায়ুদুষক কার্বন সৃষ্টিকারী প্রকল্পকে আমরা প্রাণ ও প্রকৃতি বিনাশী ধ্বংস প্রকল্প বলে মনে করি। দেশি-বিদেশি কতিপয় গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে উন্নয়নের নামে প্রাণ প্রকৃতি বিনাশী ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ এসব প্রকল্পের জন্য জনগনের অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করি। একইসঙ্গে এসব প্রকল্প বন্ধ করে তার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ প্রস্তাবিত পরিবেশ সম্মত ও সুলভ পথে বিদ্যুৎ উৎপাদন, খাদ্য নিরাপত্তা ও সার্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় সক্ষমতা বিকাশের কাজে বরাদ্দ দেবার দাবি জানাই।”
আনু মুহাম্মদ