বাংলাদেশে বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামোর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশে সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামো হচ্ছে ক্ষমতাধরদের জন্য দ্রুত সময়ে বিশাল অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার যন্ত্রবিশেষ। সাংবিধানিকভাবে বলা হয় জনগণ সব ক্ষমতার মালিক।

স্বভাবতই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামোয় যারা বসে থাকে তারা তাদের কর্মকান্ডের জন্য জনগণের নিকট জবাবদিহিতে বাধ্য থাকার কথা কিন্তু শুভংকরের ফাঁকি হচ্ছে সব ক্ষমতার মালিক জনগণের নিকট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাধররা কেউ জবাবদিহিতে বাধ্য নয়। ফলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উপর জনগণের কোন নিয়ন্ত্রন নাই। এই অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতাই হয়ে পড়েছে ক্ষমতাধরদের জন্য দ্রুতসময়ে বিশাল অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার স্বর্গরাজ্য। আর জন’জীবনের জন্য এক জ্বলন্ত অভিশাপ।

ক্ষমতার এই চরিত্রের কারনে ক্ষমতায় বসার জন্য বা ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট হওয়ার জন্য অনেকের মাঝে এক বিকৃত মানসিকতার জন্ম দিয়ে চলেছে এই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা।ক্ষমতা হয়ে পড়েছে দানব উৎপাদনের কারখানা। এই কারখানায় ঘটনাক্রমে বসে কেউ মানবিকতার পক্ষে দাঁড়ালে অথবা ক্ষমতাধর ও ক্ষমতা সংশ্লিষ্টদের দুর্ণীতি-লুটপাটের বিপক্ষে দাঁড়ালে তার কপালে ভোগান্তি জুটবে এটাই স্বাভাবিক।

জন-জীবনের জন্য হুমকি সরুপ এমন কোন কিছুর হাত থেকে জন-জীবনকে রক্ষার জন্য ক্ষমতাধরদের দৃষ্টি আকর্ষন করাটাই এখানে যথেষ্ট নয়, এর সঙ্গে ক্ষমতাধরদের আকাঙ্খিত সন্তুষ্টিবিধানের প্রশ্নটি জড়িত।ক্ষমতাধরদের সন্তুষ্টিবিধান করতে সক্ষম হলে ছয়কে নয় করা কোন বিষয় না। জবাবদিহিহীন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার এই লোভনীয় চরিত্রই হচ্ছে সব নষ্টের মুলে। ক্ষমতার এই চরিত্র বহাল রেখে দুর্ণীতির প্রশ্নে জিরো টলারেন্স একটা হাস্যকর বিষয়। ক্ষমতার শীর্ষে বসে লোভনীয় এই ক্ষমতা হাতছাড়া করতে কেউ চায় না বলেই ক্ষমতার হাতবদলে খুনোখুনীর বিষয়টি বাংলাদেশে স্বাভাবিক হয়ে পড়েছে।

অর্থাৎ বাংলাদেশের সংবিধান প্রনেতারাই এই খুনোখুনীর জন্য দায়ী। তবু এরা সংবিধানের বিদ্যমান চরিত্র বহাল রাখতেই তৎপর। কারন একটাই বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে দ্রুত বিশাল সম্পদের মালিক হওয়ার যে বৈশিষ্ট বিদ্যমান তাকে তারা পরিত্যাগ করতে চায় না। ফলে যতদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার এই চরিত্র বহাল থাকবে ততদিন ক্ষমতাধররা নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি করবে এটাই স্বাভাবিক আর এই ক্ষমতা যতদিন বহাল থাকবে জন-জীবনে ভেগান্তির সমস্যার সমাধানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাধররা তৎপর হবে না। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে জনগণের নিকট জবাবদিহিতে বাধ্য করার জন্য সাংবিধানিক ক্ষমতা কাঠামোর সংস্কার ভিন্ন অন্যকোন পথে জন-জীবনের ভোগান্তি এবং ক্ষমতাধরদের মধ্যে স্বার্থকেন্দ্রিক খুনোখুনি বন্ধ করা সম্ভব নয়। সব সমস্যার মুলে ক্ষমতার মধুর হাড়িটির লোভনীয় অবস্হান।

ক্ষমতার এই মধুর হাড়িটি যতদিন বহাল থাকবে ততদিন রানা প্লাজা, নিমতলি, চকবাজারের মত ঘটনার মতো আরো জন-জীবনে ভোগান্তি সৃষ্টিকারী ঘটনা যেমন ঘটবে তেমনই ১৫ আগষ্ট, ২১ আগষ্ট ও জিয়াউর রহমানের মত হত্যাকান্ডের ঘটনার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা থেকেই যাবে।এসব হত্যাকান্ডে হত্যার শিকার ব্যাক্তিদের নিয়ে মর্মবেদনা থাকলে ক্ষমতাকে জনগণের নিকট জবাবদিহিতে বাধ্য করার মত পদক্ষেপ আমরা দেখতে পেতাম কিন্তু তা হয়েছে কি? এটা তারা করবে না কারন হত্যাকান্ডে হত্যার শিকার ব্যাক্তিদের চেয়ে ক্ষমতার মধুর হাড়িটি তাদের নিকট বেশী মুল্যবান তাই নয় কি ?

মতিন উদ্দিন
বাংলাদেশ

 

2021-01-30 06:29:31

0000-00-00 00:00:00

Published
Categorized as 17

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *