বাংলাদেশে ডিসেম্বরে করোনার বিপদ সংকেত

বাংলাদেশে গত আট মাসে করোনার যে সংক্রমণ সেটি করোনার আসল রূপ নয় বরং ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ যে শীত শুরু হবে সেই সময় করোনার রুদ্ররূপ বাংলাদেশ দেখবে এমনটি মনে করছেন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ হয়েছিলো ৮ মার্চ। সেই হিসেবে বাংলাদেশে করোনার ৮ মাস পার করেছে। বাংলাদেশে করোনার পুরো সময়টি পার করেছে মোটামুটি গরম কালে।

গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, যে কোন দেশেই করোনার প্রকোপ উঞ্চতার সাথে কমে যায়। যদিও বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা এর কোন বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য দাঁড় করাতে পারেননি। এই ধারণাটিও অমূলক নয়। দেশে দেশে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো ইউরোপ। ইউরোপের দেশগুলোতে শীত চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে করো’নার প্রকোপ কমে গিয়েছিলো।

এখন আবার শীতের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে করোনার প্রকোপও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে করোনার যে জীন ছিলো সেটি অপেক্ষাকৃত দুর্বল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আ’মেরিকা এবং ইউরোপ থেকে প্রচুর লোক বাংলাদেশে এসেছে। তারা কোয়ারেন্টাইন বা স্বাস্থ্যবিধি মানেনি।

ফলে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে পরীক্ষায় যে করোনার যে সংক্রমণ ধরা পড়ছে, সেগুলো আতংক এবং উদ্বেগের। এছাড়াও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মূলত পাঁচটি কারণে শীতে বাংলাদেশের করোনা ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে। কারণগুলো হলো:

১) শীতে করোনার প্রকোপ বাড়ে:
এটি মোটামুটি এখন স্বতঃসিদ্ধ যে শীতে করোনা ভয়ংকর হয়ে ওঠে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং ভা’রত তার প্রমাণ। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশে তিনমাস শীত থাকে। মোটামুটি ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফ্রেরুয়ারির কিছু অংশ জুড়ে শীত থাকে। সে সময় বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি অনেক খারাপ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২) দেশে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, শীতে বেশি হয়:
বাংলাদেশে একটা বড় অংশ শিশু নিউমোনিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন। শীতে এই নিউমোনিয়া এবং শ্বাসকষ্টের প্রকোপ বাড়ে। শুধু শিশু নয়, বাংলাদেশে ঠান্ডা সর্দি জনিত রোগ শীতে বাড়ে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়ার প্রকোপ পুরো বছর জুড়ে যা হয় তার ৬০ শতাংশ হয় শীতকালে। এই বাস্তবতায় শীতে যদি বাংলাদেশে করো’নার প্রকোপ বাড়ে, তাহলে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টের সঙ্গে মিলে এই রোগ বাংলাদেশে একটি ভ’য়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

৩) ভ্যাকসিন নেই:
আশা করা হয়েছিলো নভেম্বর, ডিসেম্বরে ভ্যাকসিন আসবে। ইতোমধ্যে ভ্যাকসিনের জন্য বাংলাদেশ সরকার চুক্তিও করেছে। কিন্তু আগামী দুই/তিন মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন আসবে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করছেন না। এটির জন্য অন্তত চার থেকে পাঁচ/ছয়মাস অপেক্ষা করা লাগতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

৪) দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে:
প্রথমবার ধারণা করা হচ্ছিল একবার কেউ করোনাতে আক্রান্ত হলে তার শরীরের মধ্যে এন্টিবডি তৈরি হয় এবং তার দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। কিন্তু এখন এই ধারণা পাল্টে যাচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে যে, একজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার দুই, আড়াই মাস পর দ্বিতীয় দফায় আরেকবার আ’ক্রান্ত হচ্ছেন। কেউ কেউ তৃতীয় দফায়ও আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে বাংলাদেশে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা আবার আক্রান্ত হতে পারেন। করোনা হয়ে গেছে, আর আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই- দেশে চলমান এই সাধারণ ধারণা ও ভ্রান্তির কারণে দেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের বাড়তে পারে।

৫। স্বাস্থ্য বিধির বালাই নেই
সরকারের পক্ষ থেকে বারবার স্বাস্থ্য বিধি ও মাস্ক ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সরকারের এই নির্দেশনা মানুষ গায়ে মাখছে না। রাস্তাঘাটে সর্বত্র মানুষ অবাধে চলাফেরা করছে অধিকাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছে না, স্বাস্থ্য বিধির বালাই নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এর মাশুল দিতেই হবে।

2021-01-30 06:29:31

0000-00-00 00:00:00

Published
Categorized as 17

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *