বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ও স্বাধীনতার প্রশ্নে ১৯৭১ সালে মার্কিন সরকারের অবস্থান ছিলো পাকিস্তানের পক্ষে। আর ঠিক সে সময় শক্তিশালী রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সসনের সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নেয় দেশটির বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি।
তাই ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে দলটি ও মার্কিন জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির পরিবার জড়িত রয়েছে ওতোপ্রতোভাবে।
সে সময় সরকারি চাপ উপেক্ষা করে সিনেটে পাকিস্তানি হানাদারের গণহত্যার কথা তুলে ধরেন ক্লিনটন, ওবামা, জো বাইডেনের পূর্বসূরীরাই। শুধুমাত্র বিরোধী দল হিসেবে সরকারের বিরোধীতার খাতিরেই নয়, ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী বর্বরতা বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত আদায়েও ভূমিকা ছিলো দলটির।
তাই এবারের মার্কিন নির্বাচনকে ৭১’র ঋণ শোধের সুযোগ বলেও মনে করছেন সেখানে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা।
মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়কালীন বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন রিপাবলিকান পার্টি প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সসনের একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিল। তাই মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে দেশটির মিত্র হিসেবে পরিচিত পাকিস্তানের অখণ্ডতার পক্ষ অবলম্বন করে মার্কিন সরকার।
আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা রুখতে সামরিক সহযোগিতা দিতেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পক্ষে অবস্থান নেয় তারা। আর ঠিক ওই সময় শক্তিশালী সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেন জন এফ কেনেডি পরিবারের সন্তান এডওয়ার্ড কেনেডি। ডেমোক্রেটিক এই সিনেট টেড কেনেডি নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিপ্রাণ বাঙালির সহায়তায় এগিয়ে আসনে এই ডেমোক্রান্ট সিনেট। সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ছোট ভাই টেড কেনেডি সে সময় রাষ্ট্রযন্ত্রের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আওয়াজ তোলেন।
সেই দুঃসময়ে গণহত্যা রোধ করা, পাকিস্তানকে মার্কিন সহায়তা বন্ধে সরাসরি মার্কিন প্রশাসন বিরোধী সাহসী অবস্থান নেন এই ডেমোক্রেট নেতা। তার দলের অনেক নেতাই তখন তার পাশে দাঁড়ান।
মানবতাবাদী এই নেতা শরণার্থীদের দুর্দশা দেখতে গিয়েছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও। দেশে ফিরে প্রায় ৯ লাখ শরণার্থীর মানবেতর জীবনযাপন সম্পর্কে এক মর্মস্পর্শী প্রতিবেদন জমা দেন সিনেটে৷ শুধু প্রতিবেদন জমা দিয়ে থেমে থাকেননি কেনেডি পরিবারের ছোট ছেলে। শরণার্থীদের প্রতি বিশ্ব সভার দৃষ্টি আকর্ষণ, তাদের জন্য তহবিল সংগ্রহেও ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।
১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ সফরেও এসেছিলেন এডওয়ার্ড কেনেডি। সেই থেকে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। পরবর্তিতে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মুক্তিযুদ্ধের মৈত্রী সম্মাননায় ভূষিত করে।
২০০৯ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৪৭ বছর যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুয়েটস রাজ্যের সিনেটর ছিলেন এই মহান মানুষটি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ডেমোক্রাট দলের টেড কেনেডির অবদানের কথা স্মরণ করে এবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলকে সমর্থন আর ভোট দিয়ে কিছুটা ঋণ পরিশোধের সুযোগ নিতে চান প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
প্রবাসী সাংবাদিক ও সাহিত্যিক কবি মুকতাদীর চৌধুরী তরুণও ডেমোক্রান্ট ও জো বাইডেনের পক্ষে ভোট দিতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রবীণ বাংলাদেশিরা বলছেন, তারা চান, অভিবাসীদের দেশ যুক্তরাষ্ট্র যেন আরও বেশি অভিবাসীবান্ধব হয়। এজন্য জো বাইডেনের বিকল্প দেখছেন না তারা।
2021-01-30 06:29:31
0000-00-00 00:00:00