দেয়াল ঘড়ি মানেই বিশাল সাইজের একটা বাক্স দেয়ালে সাঁটা। সেখানে গোল বাক্সের নীচে লম্বাটে একটা খোপে দণ্ডের মাথায় গোল চাতকী অনবরত ডানে বামে দুলে যাওয়া। বিরামহীন এই দুলুনি। ডান বা বামে কাউকে ছুঁইয়ে দিবে সে আশায় হা করে তাকিয়ে থেকে ঘার ব্যথা হতো ঠিকই, কিন্তু সে ছুঁতে পারতোনা। পেন্ডুলামের দুলনিতেই গোল বাক্সের ভেতরের কাঁটা গুলি খুব আস্তে আস্তে তার জায়গা পরিবর্তন করে সময় জানান দিত।
শ্রিংলা হঠাৎ বাংলাদেশ সফরে। হয়তো এই সফর তার নির্ধারিত সফর নয় বলেই বলা হচ্ছে ‘হঠাৎ সফর’। এর পালে হাওয়া দিয়েছে দুটি ঘটনা। প্রথম ঘটনা – খুলনার কিছু যুবক ‘আগুয়ান ৭১’ নামে একটা ব্যানারে সীমান্ত হত্যা নিয়ে, একটি কনভেনশন আয়োজন করেছিল। সেটি বন্ধ করে দিল সরকার। কারণ বন্ধু প্রতিম দেশে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বাংলাদেশ সফরে থাকবেন সে সময়ে। দ্বিতীয় ঘটনা তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে দু দেশের টানাপোড়ন। দীর্ঘ দিন থেকেই এই সমস্যা ঝুলে আছে। ভারত নীতিগত ভাবে একমত কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা চায় না বলেই সেই সমস্যার সমাধান হয় না। এমন একটা অজুহাত আছে। চীন বাংলাদেশকে মোটা অংকের টাকা ধার দিচ্ছে খুব কম সুদে, তিস্তা নদীর সংস্কারে। এই সংস্কারের ফলে শুকনা মৌসুমেও তিস্তায় প্রবাহ থাকবে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশে স্রিংলা এসেছেন তাকে অভ্যর্থনা জানাতে বাংলাদেশের পক্ষে বিমান বন্দরে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কেউ উপস্থিত ছিলনা। এমনই জানা যাচ্ছে সামাজিক মিডিয়ার কল্যাণে। উল্লাসিত হয়ে হয়তো এই অনুপস্থিতি নিয়ে দুদেশের সম্পর্ক – ‘স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক’, তা নিয়ে হয়তো ট্রল করা যায়, তবে এটা নিশ্চিত করে যে, যারা এই বিষয়টি নিয়ে ট্রল করে, তারা এই দু দেশকেই পছন্দ করে না। কল্যাণ প্রত্যাশা করে না। ভিন দেশকে হেয় করতে গিয়ে নিজের দেশকেই অবজ্ঞা করছে প্রতিনিয়ত। রাষ্ট্রীয় প্রটোকল যদি বলে তাকে স্বাগত জানাতে বিমান বন্দরে উপস্থিত থাকবার কথা তবে এই উপস্থিত না থাকাটা দোষের।
চীনের সাথে বাংলাদেশে সম্পর্ক বাংলাদেশকে নতুন ভোর উপহার দিবে বলে অনেকেই দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করা শুরু করেছে। নতজানু পররাষ্ট্রনীতি আদৌ ভোর আনবে তো? চীন যখন অর্থ নিয়ে এগিয়ে এসেছে, উল্লাসিত না হয়ে সেনা নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমারের দিকে ফিরে দেখা জরুরী। শোনা যায় মিয়ানমার চীন নিয়ন্ত্রিত। তারাই সে দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে। যেমনটি মনে করা হয় বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ককে। বাংলাদেশ যে পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে তাতে তো কোন সন্দেহ নাই। আগামীর বাংলাদেশ কি বিশেষ বাহিনী নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ নাকি জনগণের বাংলাদেশ। ভাববার কারণ কি আদৌ নাই? হঠাৎ করে শক্তিশালী প্রতিবেশী দয়া পরবশ হয়ে গরীবের মঙ্গল কামনায় ঝাঁপিয়ে পড়ল, নাকি গরীবের গরিবি সম্বল করে গরীবের ঘরের দিকে নজর দিল?
শত ঘাটে নাও ভিড়াইলে মাঝি হয় দক্ষ। বাংলাদেশ দেশ হিসাবে তার প্রতিবেশী সকল দেশের সাথেই সম্পর্ক রাখবে এটাই স্বাভাবিক। যদি বিষয়টা এমন হয় – তিস্তা প্রকল্পের নামে বাংলাদেশ দেশের স্বার্থ বিবেচনা না করেই ভারতকে ছাড় দিল অর্থাৎ ভারতের স্বার্থ সংরক্ষণ করল এবং একই সময়ে এই তিস্তা প্রকল্পের নামে বিশাল অংকের লোন এনে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নিলো?
প্রতিবেশী এক দেশের সাথে সম্পর্ক থাকলে অন্য দেশের সাথে সম্পর্ক করা যাবে না এমনটি হবার আদৌ কি কোন কারণ আছে? প্রশ্ন ওঠে তখনই, বাংলাদেশ তার নিজস্বতা নিয়ে এই সম্পর্ক করছে বা না।
আদীল এ হোসেন
ঢাকা
2021-01-30 06:29:31
0000-00-00 00:00:00