নতুন শ্রম আইন কুয়েতে বিপদে পড়েছে বাংলাদেশি প্রবাসীরা

কুয়েত সরকার অভিবাসী কমাতে একটি প্রবাসী কোটা বিল প্রণয়ন করেছে। ওই খসড়া আইনে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য কোটা প্রস্তাব করা হয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। এর আগে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল খালিদ আল সাবাহ বলেছিলেন, কুয়েতে অবস্থানরত অভিবাসীর সংখ্যা ৭০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।

তার ওই মন্তব্যের পর সরকার নতুন এই শ্রম অর্থাৎ অভিবাসী আইন তৈরির পদক্ষেপ নিয়েছে।ওই বিলে বলা হচ্ছে, কুয়েতে বসবাসকারী ভারতীয়দের সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশের বেশি কখনই যেন না হয়। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের এই দেশটির অর্থনীতি তেলবিক্রির ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।

কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসে অর্থনৈতিক সংকট এবং তেলের দাম পতনের কারণেই এ সিদ্ধান্ত। উপসাগরীয় দেশ কুয়েতে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ফলে দেশটিতে ৪ মাসেরও বেশি সময় লকডাউন-কারফিউ শেষে একটি বাদে বাকি সব এলাকা থেকে লকডাউন উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।

তবে পুরো কুয়েতে ৯ ঘণ্টার কারফিউ চলছে, রাত ৮টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত।স্বাস্থ্যবিধি মেনে, ধাপে ধাপে জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান চালু হচ্ছে; খুলেছে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খুলেছে; তবে স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীরা অনেকটাই চিন্তাগ্রস্ত। কুয়েতের প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলো লকডাউনমুক্ত হওয়াতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই কাজে যোগ দিয়েছেন।

তবে করোনা পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে অনেকে কাজ হারিয়েছেন। অর্থাভাবে স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীরা ফের ব্যবসা চালু করতে প্রায় অক্ষম। পুঁজি হারাতে বসেছেন শতশত ক্ষুদ্র-মাঝারি প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী। কুয়েতে কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় দুই লাখেরও বেশি প্রবাসী কর্মহীন হয়ে পড়বেন। দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম এ খবরটি প্রকাশ করেছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের প্রবাসীদের মধ্যে করোনা পরিস্থিতির আগে ছুটিতে গিয়ে যাদের আকামার মেয়াদ শেষ হয়েছে, তাদের ফের কুয়েতে প্রবেশ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদিকে জনসংখ্যা বৈষম্য নিরসনে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে দেশ কুয়েত।

মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের কম অভিবাসী হওয়া উচিত, কিন্তু এখন মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ স্থানীয় নাগরিক আর ৭০ শতাংশ অভিবাসী, এই অনুপাতের কথা বলেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। কুয়েতের জনসংখ্যা প্রায় ৪৮ লাখ, যার মধ্যে সাড়ে ১৪ লাখ স্থানীয় নাগরিক এবং প্রায় ৩৪ লাখ অভিবাসী।

কুয়েত ভারত ছাড়াও মিসর, পাকিস্তান এবং ফিলিপাইনের অসংখ্য অভিবাসী এই আইনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকেই দেশটিতে অভিবাসীবিরোধী সমালোচনা জোরালো হতে থাকে। রাজনীতিবিদ ও নামকরা ব্যক্তিরা দেশে অভিবাসীর সংখ্যা কমানোর দাবি জানান। বর্তমানে কুয়েতে বিভিন্ন পেশায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন।

একদিকে করোনা পরিস্থিতিতে প্রবাসীরা চাকরি ও স্বল্প পুঁজির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারানোর শঙ্কায়; অন্যদিকে কুয়েতের মন্ত্রিপরিষদে প্রবাসী কমানোর এ প্রস্তাব উত্থাপন, সব মিলিয়ে স্বস্তি নেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

কুয়েত সরকারের প্রবাসী কমানোর খসড়া আইন প্রণয়ন প্রসঙ্গে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর ও দূতাবাস প্রধান মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, ওই খসড়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে তিন শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এই আইনের বাস্তবায়ন হওয়ার আগে কুয়েতি কতৃর্পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে খসড়ায় উল্লিখিত শতাংশ আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছি আমরা। একাধিক কোম্পানিতে প্রবাসীদের বকেয়া বেতন পাইয়ে দিতেও দূতাবাস আইনি সহযোগিতা দিচ্ছে।

এছাড়াও তিনি যোগ করেন, প্রবাসীদের প্রয়োজনীয় সবধরনের সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবামূলক কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষ করে পাসপোর্ট ডেলিভারি ও নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া সহজতর করা হয়েছে।

2021-01-30 06:29:31

0000-00-00 00:00:00

Published
Categorized as 17

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *