লাল মওলানা ভাসানীকে কেবল বাংলাদেশ নয়, নিপীড়িত নারী পুরুষের গোটা দুনিয়া চেনে। ধর্মান্ধ কূপমণ্ডক আল্লামা আহমদ শফির মতো মানুষ তৈরি হয় যেখানে- দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে পড়াশুনা কিংবা সারাজীবন ইসলামের মতো একটা ধর্মের সক্রিয় অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর পক্ষে নিরীশ্বরবাদী প্রগতিশীল রাজনীতিকসহ নির্বিশেষ নাগরিকের ভরসার স্থল হয়ে ওঠা গোটা দুনিয়াতেই বিরল এক দৃষ্টান্ত।
পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই এর অন্তঃসারশূন্যতা উপলব্দি করা তাই তাঁর পক্ষেই প্রথম সম্ভব হয়েছিল। এর অংশ হিসেবে ১৯৪৮ সালেই তাঁকে এই অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে উচ্চকণ্ঠ হতে দেখা গেছে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনকালে তাঁর প্রণীত ২১ দফাই পরবর্তীতে শেখ মুজিবের ৬ দফায় রূপান্তরিত হয়েছে, এদেশের মানুষের মুক্তির সনদে পরিণতি পেয়েছে এবং স্বায়ত্তশাসনের মতো করে স্বাধীনতা নামক পরম আরাধ্য ভাববস্তুটিও এই মওলানার মাধ্যমেই সমস্ত সাধারণে সংক্রমিত হয়েছে।
৫৪-র নির্বাচন পরবর্তী প্রায় প্রতিটি জনসভায় তিনি স্বাধীনতার কথা বলেছেন, সাধারনের মনে স্বাধীন সত্তার মর্যাদা ও স্বাধীনতার আকুতি সৃষ্টি করেছেন, স্বাধীনতা লাভে সর্বোচ্চ ত্যাগের সংকল্প সৃষ্টি করেছেন। এসমস্ত কারণে এদেশের মানুষ মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে বাঙালির জাতির পিতা বলতেন, মওলানার সভা সমাবেশে তাঁকে জাতির পিতা সম্বোধন করে স্লোগান দিতেন।
নেতৃত্ববিহীন রাজনীতির বাংলাদেশে মওলানা ভাসানীর মৃত্যুদিন তাই নবতর তাৎপর্য লাভ করেছে; ডান বাম, রাজনৈতিক অরাজনৈতিক সমস্ত মানুষ মৃত্যুবার্ষিকীতে মওলানাকে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছে। কোনও কোনও রাজনৈতিক দল ভাসানীর ভাবমূর্তি ও কীর্তিকে সামনে দাঁড় করিয়ে নির্বিশেষ হয়ে ওঠার ঐকান্তিক প্রয়াসও পাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কী কারণে বা কাদের অতিবুদ্ধি কিংবা নির্বিদ্ধিতার কারণে গোটা বাংলাদেশকে রাজনীতি সচেতন করেও রাজনীতির সুফল থেকে ভাসানীকে বঞ্চিত হতে হয়েছে- ইতিহাসের সেই শিক্ষা নিঃসন্দেহে ভাসানীকে ভালোবাসা মানুষেরা মনে রাখবে।
আজিজুল হক
বাংলাদেশ
2021-01-30 06:29:31
0000-00-00 00:00:00