অনিদের বাড়িটা বিশাল ডুপ্লেক্স। নিচতলায় রান্নাঘর, খাবার ঘর, আর একটা গেস্ট রুম।
দোতলায় বিশাল চারটা শোবার ঘর, লাইব্রেরী কাম স্টাডি রুম। ছোট্ট একটা কিচেন, মাঝে মধ্যে চা বানিয়ে খাওয়ার জন্য।
এতো বিশাল বাড়িতে রুপার কেমন যেন গা ছমছম করে সবসময়। এমনিতে রুপার খুব ভুতের ভয়। একটু শব্দ হলেই ভয়ে চমকে ওঠে।
অনির ঘুম খুব গাঢ়। শোয়ার সাথে সাথে ঘুম চলে আসে ।আর একবার ঘুমিয়ে গেলে সহজে আর ঘুম ভাঙেনা।
তবে মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর অনি ছাদে চলে যায় তারা দেখতে।রাতের তারা ভরা আকাশ অনির খুব পছন্দ।
ওদের বিয়ের প্রায় এক মাস হতে চলল। এক মাস পর এক গভীর রাতে রুপার ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর মনে হল, আমি নিশ্চয় শৈশব-কৈশোরে বড় ধরনের কোনো পুণ্যকর্ম করেছি। বরো ধরনের কোনো পুন্যকর্ম ছাড়া এমন একজন ভালো মানুষ কে স্বামী হিসেবে পাওয়া যায় না।
অনির প্রতি ভালোবাসায় রুপার চোখ ভিজে উঠলো। সে আপন মনেই কিছুক্ষণ কাঁদলো ।
তারপর কপালে, চোখের পাতায় আলতো করে চুমু দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি অনি। আমার মনের গভীরে তোমার জন্য যত্ন করে তুলে রাখা এ ভালোবাসা কখনোই নষ্ট হবে না ।
আমি নষ্ট হতে দিবোনা।
রুপা আস্তে করে অনির পাশে শুয়ে একসময় ঘুমিয়ে গেল।
ঘুম ভাঙলো অনির গান শুনে। হাতে কফির মগ নিয়ে অনি গাইছে
ডাকে পাখি
খোলো আঁখি
দেখো সোনালী আকাশ
ভোরের বাতাস ।
ঘুম ভেঙে অনির মিষ্টি কন্ঠের গান আর প্রিয় কফি পেয়ে নিজেকে এতো সুখি মনে হচ্ছিল রুপার।
যেনো রুপার মত এতো সুখী মেয়ে পৃথিবীতে আর একটিও নেই।
রুপা স্মিত হেসে কফির মগটা হাতে নিয়ে মনে মনে বললো, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ।
ভাগ্যিস একজনের মনের আকাশ আরেকজন দেখতে পারে না ।
যদি দেখতে পেতে, তাহলে দেখতে কি গাঢ় ভালোবাসা তোমার জন্য আমার বুকে জমে আছে।
অনি নাস্তার টেবিলে কফি খেতে খেতে বললো, সিলভার নেত্রকোনা থেকে ফোন এসেছিলো, তুমি তখন ঘুমাচ্ছিলে। তাই ডাকিনি।
নাস্তা খেয়ে ঝটপট রেডি হয়ে নাও ।
তোমাকে নেত্রকোনা যেতে হবে আজকেই।
রুপা খুব অস্থির হয়ে উঠলো। তার গলা দিয়ে খাবার নামছে না। সে উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইলো কেন, কি হয়েছে?
মামার কিছু হয়নি তো?
এতো অস্থির হবার মতো কিছু হয়নি। তোমার মামার শরীর একটু খারাপ করেছে। এর বেশি কিছুই নয়। শিমুল ফোন করেছিল। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলো।ওর কোন কথাই ঠিক মতো বুঝিনি। শুধু এইটুকু বুঝেছি, বাবা তোমাকে দেখতে চাইছে।
রুপা স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বলল ও।
আমি গাড়ি দিয়ে দিচ্ছি। মকবুল ভাই ও সাথে থাকবে। তুমি পারবেনা যেতে ?
রুপা মাথা কাত করে বললো পারবো।
ভয় পাবে না তো,?
আমাকে কি তোমার সাথে যেতে হবে?
রুপা খুব ভয় পাচ্ছে। কিন্তু সে কিছুতেই সেটা অনিকে বুঝতে দিতে চায় না।
সে তার চেহারায় খুব সহজ একটা ভাব এনে বললো, ভয় পাবো কেন? গাড়িতেই তো যাবো।
অনি ও মনে মনে ভাবছে, সিলভার কেন তাকে জোর করছে না?
কেন বলছে না, তুমিও চলো। তোমাকে একা রেখে যেতে আমার খুব খারাপ লাগবে।
কেন সে বুঝতে পারছে না তাকে ছাড়া একা একা বাস করা এখন আমার জন্য কতটা কষ্টকর ।
রুপা ব্যাগ গোছাতে যেয়ে, মনে মনে নিজেই নিজেকে গালি দিলো।
কেন সে একটা বার মুখ ফুটে বলতে পারল না, আমার একা যেতে ভয় করবে। তুমি আমার সঙ্গে চলো। এখন কিভাবে বলে তুমি ও চলো।এইসব ছেলে মানুষী করতে একদম ইচ্ছে করছে না।
কেন যে বলার সাথে সাথে রাজি হলো না। এখন নিজেই নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছা করছে ।
রুপার খুব কান্না পাচ্ছে।সে অনির চোখে চোখ রেখে মনে মনে বললো অনি তুমি কি বুঝতে পারছ?
তোমাকে ছাড়া যেতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার যে সারাক্ষনই ইচ্ছে করে তোমার গায়ের সাথে গা ঘেঁষে থাকতে। কথায় কথায় তোমাকে ছুঁয়ে দিতে।
আমি কিভাবে থাকবো তোমাকে ছাড়া ।
অনি মিষ্টি হেসে রুপার চোখের পানি মুছে দিয়ে রুপাকে এক টানে বুকে টেনে নিল ।
মাথায় ছোট্ট করে একটা চুমু দিয়ে বললো আমি জানি সিলভার , তুমি মুখে স্বীকার না করলেও আমাকে ছেড়ে যেতে তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
আচ্ছা ঠিক আছে আমার ব্যাগটাও গুছিয়ে ফেলো। আমিও যাচ্ছি তোমার সাথে ।
রূপা প্রচন্ড রকম আবেগে কেঁপে কেঁপে উঠছে।সে খুব চেষ্টা করছে চোখের পানি লুকিয়ে ফেলতে। কিন্তু পারছে না।ছলোছলো চোখে রুপা অনির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ ।
নেত্রকোনায় অনিদের জন্য দু-দুটো চমক অপেক্ষা করছিলো।
এক অনির শশুর মশাই মারা গেছেন।
দুই পারুল ফিরে এসেছে।
মূলত পারুলকে দেখেই অনির শ্বশুরের হার্ট অ্যাটাক হয়।
রুপাকে জড়িয়ে ধরে পারুল খুব কান্নাকাটি করছিলো। তারজন্যেই নাকি তার বাবাকে এভাবে মরতে হলো। কান্নার ফাঁকে ফাঁকে সে যা বলছিলো, তা থেকে বোঝা গেল
পলাশ নামের যে ছেলের সাথে সে পালিয়েছিল।সে একটা ফলট।
সে তাকে বিয়ে না করে এতদিন ভোগ করেছে। টাকা পয়সা শেষ হবার পর গয়নাগাটি চুরি করে নিয়ে পারুলকে একা ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে।তার এ জীবনের আর কোন মূল্য নেই।সে এখন মরে যেতে চায়।
পারুলের পাগলামি এতটাই বাড়লো যে কখন কোন দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে বলা যায় না।
বাধ্য হয়েই দুই বোনকে বসবাসের জন্য অনিদের বাড়িতে নিয়ে আসতে হলো।
চলবে……
রোকেয়া পপি
লেখিকা
বাংলাদেশ।
2021-03-14 16:53:25
2021-03-14 05:53:25