ট্রাম্পের করফাঁকির তথ্য ফাঁস

বিতর্ক আর বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেন এক সূতায় গাঁথা। ট্রাম্প, যিনি নিজেকে একজন বিলিওনিয়ার হিসেবে দাবি করেন। এবং ফোর্বস-সহ বিভিন্ন সাময়িকী ও গণমাধ্যমে বিলিওনিয়ার হিসেবেই তার সম্পদের বিবরণী তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন সময়। ট্রাম্পের আয়কর বিবরণী নিয়ে যে খবর প্রকাশ করেছে তা হল ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছর তিনি আয়কর দিয়েছেন মাত্র ৭৫০ ডলার। 

বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৬৩ হাজার ৭৫০ টাকা। হোয়াইট হাউসে অবস্থানের প্রথম বছরও তিনি এই একই পরিমাণ আয়কর পরিশোধ করেছেন। মার্কিন নির্বাচনের আগে গণমাধ্যমে এমন প্রতিবেদন প্রকাশ নির্বাচনী প্রচারণায় ‘বোমা’র মতো কাজ করবে বলেও বলছে।

ডেমোক্রাট প্রার্থী জো বাইডেনের সঙ্গে প্রেসিডেন্টশিয়াল ডিবেট’র আগের দিন আর ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মার্কিন নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হল। আগামী সপ্তাহে এই সংক্রান্ত আরও বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। শুধু তাই নয়, ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প এর আগে ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছর আয়করই দেননি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ওই সময়ে তিনি নাকি যত আয় করেছেন তার চেয়ে অনেক বেশি লোকসানের মুখে পড়েছেন। 

এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে, তার হেরে যাওয়ার শঙ্কা প্রকট, চরম চাপের মধ্যে রয়েছে তার আর্থিক অবস্থা, তিনি বর্তমানের নানা ধরনের ক্ষতির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছেন এবং কোটি কোটি ডলার ঋণের দায় তার ওপর চলে আসছে- যেগুলো তিনি ব্যক্তিগতভাবে জামিনদার (গ্যারান্টর) হয়েছিলেন।

এছাড়া, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সেবা সংস্থার সঙ্গে এক দশকের দীর্ঘ সময় ধরে চলা অডিট যুদ্ধ শেষে, ব্যাপক লোকসানের কথা বলে ট্রাম্প যে ৭২.৯ মিলিয়ন ডলার কর ফেরত নিয়েছিলেন, তার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে রাজস্ব সংস্থাটি। এ ব্যাপারে ট্রাম্পের দাবি সঠিক না হলে তাকে ১০০ মিলিয়ন ডলার বেশি খরচের মুখে পড়তে হতে পারে।

তাদের হাতে এসেছে ট্রাম্পের দুই দশকের আয়কর বিবরণী। এবং তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত শতাধিক প্রতিষ্ঠানেরও বিকরণী কাছে আছে বলে বলা হয়েছে। এসব নথিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম দুই বছরের বিস্তর তথ্য সংযুক্ত রয়েছে। এসব তথ্যে দেখা গেছে তিনি ২০১৮ ও ২০১৯ সালে আয়কর দিয়েছেন বলে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে জানতে চেয়ে ট্রাম্প সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংস্থাটির প্রধান আইনজীবী অ্যালন গার্টেন দাবি করেন, সব না হলেও বেশিরভাগই তথ্যই সঠিক নয়। এরপর তথ্য প্রাপ্তির উৎস গোপন রেখে তাকে আরও বিস্তর জানালে ট্রাম্পের কর পরিশোধের পরিমাণ সম্পর্কে গার্টেন জানান, বিগত এক দশকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০ মিলিয়ন ডলার ব্যক্তিগত আয়কর দিয়েছেন এমনকি ২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দেয়ার পরও ট্রাম্প লাখ লাখ ডলার ব্যক্তিগত আয়কর পরিশোধ করেছেন বলে দাবি গার্টেনের।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এই খবরের তথ্যকে অসত্য বলে দাবি করেছেন। এ প্রতিবেদনের দাবির প্রেক্ষিতে ট্রাম্প বলেন, আমি আসলে কর দিয়েছি। আমার ট্যাক্স রিটার্নেই আপনারা পরিষ্কারভাবে এটি দেখতে পারবেন। এটা অডিটের আওতায় রয়েছে।

এমন কি অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সেবা সংস্থা তার সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করেনি। তারা তার সঙ্গে খুবই বাজে ব্যবহার করেছেন বলেও দাবি ট্রাম্পের। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর দাবি, ১৯৭০ সালের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পই একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি তার কর পরিশোধের বিস্তারিত জনগণের সামনে তুলে ধরেননি। অথচ দেশটির আইনে এটি জানানোর বিধান রয়েছে।

২০১৮ সালে তিনি ৪৩৪.৯ মিলিয়ন ডলার আয় করেছেন অথচ নিউইয়র্ক টাইমসের হাতে আসা কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা যাচ্ছে, ওই বছর ট্রাম্পের উপার্জন ৪৭.৪ মিলিয়ন ডলার লোকসান গুনেছে।

2021-05-04 18:28:35

0000-00-00 00:00:00

Published
Categorized as 18

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *