জো বাইডেন ও কাশ্মীর বাস্তবতা বড় নির্মম

জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা পুন:প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করবে বা যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তনের ফলে সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ হবে – এমন বক্তব্য নিয়ে ভ্রান্ত আশাবাদ লালন করার অবকাশ একেবারেই নেই। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন, এমনটা বলার সময় এখনো আসেনি।

মার্কিন মিডিয়া অবশ্য ৭ নভেম্বর থেকে তাকে নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বলা শুরু করেছে। আর তিনি যদি প্রেসিডেন্ট হয়েই যান, তবুও দক্ষিণ এশিয়া ও এর হটস্পটগুলোর দিকে নজর দেয়ার চেয়ে তার সামনে আরো অনেক অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় রয়েছে।

১৯৯০-এর দশকে প্রতিনিয়ত হত্যাকাণ্ড, বোমা হামলা, গ্রেনেড বিস্ফোরণ, বনধে স্বাভাবিক জীবন যখন অচল হয়ে পড়েছিল, তখন কাশ্মীর ছিল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ও হোয়াইট হাউসের নজরে। দিল্লীতে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস নিয়মিত তাদের কূটনীতিকদের উপত্যকায় পাঠাত। ওই সময়ে ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফ্রাঙ্ক উইসনার হুরিয়াত কনফারেন্সসহ নেতাদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

আমেরিকার উদ্বেগ হারিয়ে যায় ১৯৯৮ সালের মে মাসে। ওই সময় ভারত ও পাকিস্তান পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। তখন মনে হচ্ছিল, দক্ষিণ এশিয়া হতে যাচ্ছে পরমাণু বিস্ফোরণের আবাসভূমি। পাকিস্তান ওই সময় তার দীর্ঘ দিনের লালিত তত্ত্ব গেলানোর বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে বলতে থাকে যে কাশ্মীর হলো এই অঞ্চলের পরমাণু ফ্লাশপয়েন্ট।

১৯৯৯ সালে পাকিস্তান কার্গিলে হামলা চালিয়ে কাশ্মীরের দিকে বৈশ্বিক নজর টানার চেষ্টা করে। কিন্তু ফলাফল সবার জানা।

পাকিস্তান এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, যাতে করে কাশ্মীরে হস্তক্ষেপ করা ছাড়া বিশ্বের আর কিছুই করার থাকে না। কিন্তু পাকিস্তানকে বলা হলো, লাইন অব কন্ট্রোল চুক্তি মানার জন্য। এমনকি পাকিস্তানের সবসময়ের মিত্র চীন পর্যন্ত এলওসি মেনে চলার জন্য পাকিস্তানকে উপদেশ দিয়েছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাঁচ শতাধিক অফিসার ও সৈন্য হারিয়েছে। তারা প্রতিপক্ষের ব্যাপক ক্ষতি করতে সক্ষম হয় এবং কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ কিছু হাইটসও দখল করতে সমর্থ হয়।

সময় বদলে গেছে। কাশ্মীর এখন আর বিশ্বের নজরে নেই। এখন মার্কিন কূটনীতিকদের সফর একেবারে কমে গেছে, কাশ্মীর নিয়ে তাদের রিপোর্ট করার অবস্থাও একই। তবে এর মানে এই নয় যে কাশ্মীরে কী ঘটছে, সে ব্যাপারে বিশ্ব সচেতন নয়। তবে নীরবতা রয়েছে।

আর কাশ্মীরীরাও এই নীরবতা টের পাচ্ছে। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর পাকিস্তান, তুরস্ক ও মালয়েশিয়াকে বাদ দিলে বিশ্বের আর একটি দেশও টু শব্দটি উচ্চারণ করেনি।

এই নীবরতায় কাশ্মীরীরা কষ্ট পেয়েছে। তবে ওই কষ্ট এখন আর নেই। তারা নীরবতার প্রকৃতি বুঝতে পেরেছে।

পিপলস অ্যালায়েন্স ফর গুপকর ডিক্লারেশন ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। গুপকর ডিক্লারেশনে সইকারীরা তাদের পবিত্র লক্ষ্য অর্জনের ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন। তবে এটি এখন কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়েছে।

পিএজিডি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা ডিস্ট্রিক্ট ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনে অংশ নেবে এবং ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা শুনানিতে অংশ নেবে।

এসব বাস্তবতা এর আগে আপনি পার্টির উপলব্ধিতে এসেছিল। তিন মাস আগেই তারা কাশ্মীরের মর্যাদা বাতিলের বিরুদ্ধে দায়ের করা শুনানি চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। আপনি পার্টির মতে, আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার রাস্তা কেবল এটিই আছে।

এতে বোঝা যাচ্ছে, জনগণের ক্ষতি না করে বাস্তবসম্মত কিছু করার রাস্তা এই একটিই আছে। বাইরের কেউ তাদের সমস্যা সমাধান করে দেবে, এমন আশা লালন করা অবাস্তব। বিশ্ব নতুন আকার ধারণ করছে।

জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণ করার পর সব হিসাব কষেই পা বাড়াবেন। প্রথমত, তাকে তার দেশের বর্ণবাদ, অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্বের মতো কঠিন সমস্যাগুলো সামাল দিতে হবে। ফলে তিনি দক্ষিণ এশিয়া বা কাশ্মীরের দিকে নজর দেবেন, এমনটা আশা করা হবে ভুল। এটা এই মুহূর্তে তার কর্মতালিকায় নেই।

অবশ্য, দিল্লীর আশা করা ঠিক হবে না যে কাশ্মীর নিয়ে নীরবতা স্থায়ী হয়ে যাবে।

2021-05-04 18:39:22

0000-00-00 00:00:00

Published
Categorized as 18

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *