জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হলে দেশে বিদ্যমান সংবিধান তথা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামোর মেরামতে প্

কোন নির্দিষ্ট জাতির বা নির্দিষ্ট যুগের অর্থনৈতিক বিকাশের মাত্রাই হল সেই ভিত্তি যার ওপর গড়ে উঠে সংশ্লিষ্ট জাতিটির রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ওআইনের ধ্যান-ধারনা। আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশের ক্ষেত্রে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের স্বার্থে কার্যকর অর্থনীতি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামো ও রাষ্ট্র পরিচালনার আইনগত যে ধ্যান-ধারনা কার্যকর হয়েছিল তারই ধারাবাহিকতা আমরা বহন করে চলেছি।

স্বাধীনতার নামে ভারতীয় ভূখন্ডে ভারত ও পাকিস্তান নামের দুইটি ভিন্ন রাষ্ট্র এবং তারপরে পাকিস্তান ভেঙ্গে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নামে আবারো দুইটি ভিন্ন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেও অর্থনীতি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামো ও আইনগত বিষয়ে স্বাধীন জাতীয় অবস্হান গড়ে তোলার বিষয়ে নব্য প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রসমুহের শাসকদের প্রচেষ্টা ছিল না বরং তারা বৃটিশ প্রবর্তিত অর্থনীতি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামো ও রাষ্ট্রপরিচালনার আইনগত ধ্যান-ধারনার ধারাবাহিকতা রক্ষার বিষয়ে সচেষ্ট থেকে চলেছেন। অর্থনীতিতে বৃটিশদের একক কর্তৃত্বের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একাধিক বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষায় সক্ষম অর্থনৈতিক নীতি ফলে অর্থনীতির স্বাধীন জাতীয় অবস্হান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কার্যকর প্রতিষ্ঠানসমুহের বিষয়ে বিমাতাসুলভ আচরন, দেশের সম্পদের উপর বিদেশী বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রসমুহের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় তৎপর থেকে কমিশনভোগ করা, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাধররা ও ক্ষমতা সংশ্লিষ্টরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে দ্রুতসময়ে বিশাল অর্থ-সম্পদ মালিক বনে যাওয়ার তৎপরতায় লিপ্ত থেকে অর্জিত সম্পদ বিদেশে পাঁচার করা, শিল্পনীতির ক্ষেত্রে দেশে যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান যন্ত্র নির্মানের সঙ্গে জড়িত তার ক্ষেত্রে চুড়ান্ত অবহেলা , গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের বিষয়ে সক্ষম প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে শক্তিশালী না করে ক্রমান্বয়ে তাকে দুর্বল করে ফেলা, বিদেশী বৃহৎ পুঁজির স্বার্থে দেশে সস্তা শ্রম নির্ভর শিল্প যাকিনা মুলত বৈদেশিক বাজার নির্ভর তা প্রতিষ্ঠায় মুল জোর দেয়া বা মুলত বিদেশী পূঁজিকে সমৃদ্ধ করার ঠিকাদারি নেয়া। আর এসব কাজে দেশে বিদ্যমান জবাবদিহিহীন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামো হচ্ছে প্রধান কার্যকর সংস্হা যাকিনা মূলত রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বৃটিশদের ঔপনিবেশিক আইন দ্বারা পরিচালিত।

দেশের অর্থনীতিকে শক্তভিত্তির উপর দাঁড় করাতে হলে বৈদেশিক বাজার ও বৈদেশিক পূঁজি নির্ভরতাকে কেন্দ্র করে যে শিল্পনীতি বাংলাদেশে প্রধানত কার্যকর সে ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনাটা জরুরী। দেশীয় অর্থ-সম্পদের উপর প্রধানত নির্ভর করে একাজে হাত দিতে হবে। মুল লক্ষ্য হবে দেশীয় অভ্যন্তরীন বাজার সম্প্রসারনে সক্ষম শিল্পনীতি গ্রহন করা। এই কাজে সক্ষম হতে হলে (১) দেশীয় অর্থ সম্পদের বিদেশ পাঁচার বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে, (২) দেশীয় শিল্পের শক্তভিত গড়তে হলে দেশে যন্ত্রনির্মান শিল্পের সঙ্গে জড়িত শিল্পসমুহের বিকাশে প্রধান গুরুত্ব দিয়ে অন্যান্য শিল্প প্রসার ঘটাতে হবে, (৩) দেশীয় শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের জন্য অভ্যন্তরীন বাজারের বিকাশ উপরে উল্লেখিত দুইটি বিষয় প্রধান গুরুত্ব বহন করবে, (৪) দেশীয় শিল্পের প্রসারে আলোচিত পদক্ষেপকে প্রধান গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক বাজার নির্ভর বিদেশী বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে হবে।

অর্থনীতির ক্ষেত্রে আলোচিত পদক্ষেপ গ্রহনে প্রধান বাধা হচ্ছে বিদেশী শক্তিধর রাষ্ট্রসমুহের সমর্থন পুষ্ট বৃটিশদের ঔপনিবেশিক আইন দ্বারা পরিচালিত দেশে বিদ্যমান জবাবদিহিহীন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামো। এই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামো বহাল রেখে আলোচিত শিল্পনীতি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এরজন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাধরদের কর্মকান্ডকে সাংবিধানিকভাবে জনগণের নিকট জবাবদিহিতে বাধ্য করতে সক্ষম রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামো। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে শব্দের মারপ্যাচে নিয়ন্ত্রন করা, গণবিরোধী আইন প্রণয়নকে বাধামুক্ত করার প্রয়োজনে জবাবদিহিতার বিধান না রাখা, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ ব্যায়ের ক্ষেত্রে জনগণের কোন নিয়ন্ত্রন না রাখা ইত্যাদি গণবিরোধী ধারাসমুহকে বাতিল করার জন্য রাষ্ট্রীয় সংবিধানের তথা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামোর প্রয়োজনীয় মেরামত প্রয়োজন। এই মেরামতের বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে গণমুখী কোন নীতির বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এবিষয়টি প্রগতিশীলতার দাবীদার সংগঠনসমূহ যত দ্রুত অনুধাবনে সক্ষম হবেন এবং তার বাস্তবায়নে সমমনাদের যৌথ প্রচেষ্টা নিশ্চিতে সক্ষম হবেন ততই দেশের মঙ্গল। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামো তথা দেশে বিদ্যমান গণবিরোধী সংবিধানের প্রয়োজনীয় মেরামতের আওয়াজ না তুলে শুধুমাত্র গণমুখী অর্থনৈতিক দাবীনামাকে সামনে রেখে যারা এখনও এগিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সচেষ্ট আছেন তারা প্রকারন্তরে গণস্বার্থকে কুঠারাঘাত করে চলেছেন। তাদের বোধোদয় আদৌ হবে কি?

জাতীয় অর্থনীতির বিকাশকে এগিয়ে নিতে হলে সংবিধান তথা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামোর প্রয়োজনীয় মেরামতে সক্ষমতার উপর নির্ভর করবে উপরে আলোচিত শিল্পনীতির বাস্তবায়ন যাকিনা বর্তমান বিশ্বব্যাবস্হায় বৃহৎ শক্তিধর দেশসমূহের কর্তৃত্বের কারনে দেশের কৃষিসহ সারাদেশে ক্ষুদে উৎপাদনের যে দৌরাত্ব জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসে আছে তার অবসান ঘটাবে। এই জগদ্দল পাথরের অপসারনের কাজটি সম্পন্ন করতে পারে উপরে আলোচিত শিল্পনীতির বাস্তবায়ন। আলোচিত শিল্পনীতির বাস্তবায়নের ধারায় দেশে শিল্প ও কৃষি সেক্টরে ক্ষুদে উৎপাদন ব্যাবস্হার জায়গা প্রধানত দখলে নিবে বৃহদায়তন উৎপাদন ব্যাবস্থা। বৃহদায়তন উৎপাদন ব্যাবস্হায় পণ্য উৎপাদনে শ্রমের যৌথতার বিকাশ শ্রমজীবি মানুষকে চিন্তার আমিত্ব থেকে মুক্ত করে চিন্তার যৌথতাকে স্বাভাবিক করে তোলে। আর শ্রমজীবি মানুষের চিন্তার এই যৌথতা সমাজের উচ্চতর বিকাশকে প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়টিকে সহজ করে তোলে। অর্থনীতি ও সমাজের বিকাশ সবসময় নিম্নতর স্তর থেকে উচ্চতর স্তরে বিকশিত হওয়ার দিকে ধাবিত হয় আর এ বিষয়টি যত বাস্তব হয়ে উঠে মানুষের মুক্ত মানুষ হয়ে উঠার বিষয়টিও সম্ভাবনাপুর্ণ হয়ে উঠে।

2021-01-30 06:29:31

0000-00-00 00:00:00

Published
Categorized as 17

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *