চীনের প্রভাব নিয়ে ভারত কি উদ্বিগ্ন

গত ১৮ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার আকস্মিক বাংলাদেশ সফর তেমন খবর হতো না যদি মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশ সফরে আসা তিনিই প্রথম বিদেশী কর্মকর্তা না হতেন এবং আর্থিক সহায়তার জন্য বাংলাদেশ চীনের দিকে হাত না বাড়াতো, ৬.৪ বিলিয়ন ডলারে ৯টি অবকাঠামো প্রকল্পের খবর মিডিয়াতে বিপুলভাবে প্রচারিত না হতো।

ভারতের মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছে যে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনার জন্য চীনের কাছে প্রায় এক শ’ কোটি ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, দুই দেশের মধ্যে এটি বিবদমান ইস্যু হিসেবে বিরাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। ভারত ও বাংলাদেশ দীর্ঘ দিনের অনেক বিরোধ নিষ্পত্তি করলেও তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি করতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ২০১১ সালের পর ২০১৫ সালেও ব্যর্থ হয়। তারপর থেকে আলোচনা চলছেই।

তবে তা বাংলাদেশ ও ভারতকে সুসম্পর্ক বজায় রাখা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। দিল্লিভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্টেশনের বাংলাদেশবিষয়ক বিশেষজ্ঞ জয়িতা চ্যাটার্জি বলেন, এর কৃতিত্ব যেতো পারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।

জয়িতা বলেন, হাসিনা কুশলীভাবে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিদের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। এসব প্রতিদ্বন্দ্বী তাদের নিজস্ব ভূরাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য অব্যাহতভাবে আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।

চীন ২০১৩ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) চালু করার পর ভারত ২০১৪ সালে প্রতিবেশী প্রথম নীতির প্রবর্তন করে আঞ্চলিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য। ভারত বিআরআইতে যোগ না দিলেও বাংলাদেশ দিয়েছে। ২০১৬ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশকে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের জন্য ২৪ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক প্যাকেজের প্রস্তাব দেন।

শি এই সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করেন। ২০১৭ সালে ভারত ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রস্তাব দেয়। কোনো একক দেশে এটিই সবচেয়ে বড় ঋণের প্রস্তাব ভারতের। সুস্পষ্টভাবেই এই ঋণ চীনা প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে দূরে রাখার প্রয়াস।

তবে বাংলাদেশের বিআরআই প্রকল্পগুলোর ঘনিষ্ঠ হওয়াটা ভিন্ন কথা বলে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে ২৪ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক প্যাকেজের মধ্যে ৯৮১ মিলিয়ন ডলার মাত্র ছাড় দেয়া হয়েছে।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে অগ্রগতি মন্থর হয়ে পড়েছে। একইভাবে ২০১৬ সালে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান উদ্বেগ প্রকাশ করার একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনা তহবিল বাংলাদেশ বাতিল করে দেয়।

এই দেশ তিনটি আশঙ্কা করেছিল যে এই বন্দর চীন ও ভারতের মধ্যে সামুদ্রিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র ভারত মহাসাগরে চীনকে সুবিধা দেবে। বাংলাদেশ এর বদলে প্রকল্পটি জাপানকে দেয়। একইসময় দিল্লি দৃশ্যত অসন্তুষ্ট হলেও চীনের কাছ থেকে ২০১৭ সালে ২০৩ মিলিয়ন ডলারে দুটি সাবমেরিন ক্রয় করে।

ঢাকার থিঙ্কট্যাঙ্ক বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র গবেষণা পরিচালক ফয়েজ সোবহান বলেন, সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের আলোকে বলা যায়, বাংলাদেশে চীনা ফ্যাক্টর বা এর ভূমিকা নিয়ে অনেকটাই অতিরঞ্জন হয়েছে।

তিনি বলেন, চীন ও বাংলাদেশ নতুন বন্ধু নয়, তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অনেক দিনের। চীনকে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার মনে করে এবং দুই দেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক লালন করে। তবে জাপান, ভারত ও অন্যান্য দেশের সাথেও বাংলাদেশ দৃঢ় অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক সম্পর্ক রক্ষা করে।

2021-05-04 20:11:52 0000-00-00 00:00:00
Published
Categorized as 18

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *