গনতন্ত্রের ভেলকিবাজি

চেতনা ছিটানো মানুষগুলি খুব বিরক্তকর। কারণ হিসেবে – ভিপি নুরুকে নিয়ে আমার পোষ্ট। এই চেতনা ছিটানো মানুষগুলির কোন ক্ষতি বা উপকার করেছে ভিপি নুরু তা আমার জানা নাই। অনেকেই কায়দা করে নুরুকে সাবেক ভিপি বলে। আমি বলি না। বলতে রাজি নই। নুরু এখনও ডাকসু ভিপি, কারণ তারা পদত্যাগ করে নাই। ঢাবি প্রশাসন, সরকারে থাকা চেতনার ফেরিওয়ালারা, সময় মত আর একটি ডাকসু নির্বাচন করতে পারে নাই। ডাকসু তাদের ক্ষমতাও হস্তান্তর করে নাই। সরকারে থাকা চেতনার ডিলারগণ দাবি করেন – দেশে গণতন্ত্রের সুবাতাস বহিতেছে। অথচ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। যদি বলতে হয়, বলা উচিৎ ব্যর্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রশাসন ব্যর্থ চেতনার সরকার। সাবেক ডাকসু বলাটা দোষের।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা ন্যায় সংগত। সেটাই বলছে গণমাধ্যমগুলিতে সাধারন মানুষ। ছাপার হরফে প্রকাশিত পত্রিকাগুলি তাদের প্রতি মানুষের বিশ্বাস যোগ্যতা হারাচ্ছে। মানুষ চোখে দেখছে এক, পত্রিকায় নিউজ হচ্ছে আরেক। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটবার পর মানুষের মনে স্বভাবতই সেই প্রশ্ন – সরকার দমন করছে না তো ‘পত্রিকার স্বাধীনতা’?

ধর্ষক হিসাবে ভিপি নুর এর খবর প্রকাশিত হবার সাথে সাথেই সে বন্দি হয়। বন্দি হবার সাথে সাথেই তাকে কেন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সে প্রশ্ন মানুষের মনে উঁকি দিতেই পারে। পত্রিকার তার বন্দি হওয়া, ছাড়া পাওয়া, ঢাকা মেডিক্যালের ইমারজেন্সি তে ডিবি পোশাক পরিহিত মানুষের পাহারা দেয়া এবং সব শেষে ইমারজেন্সির পেছনের গেইট দিয়ে তাকে আবার ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া সব মিলিয়ে মানুষের মনে হাস্যরসের উদ্রেকের সাথে সাথে মানুষের মনে একটা প্রশ্ন দানা বেঁধেছে – কেন?

রাস্তায় নেমে আওয়াজ দিলেই শাসকেরা নড়ে চড়ে উঠে আমলে নেয়। এটাই খাঁটি কথা। আর এই কথাটা খাঁটি সব সময়ের জন্য। ১৯৫২, ১৯৭১, ১৯৯০ তার প্রমাণ। পথে নেমে আওয়াজ দেয়া ছাড়া ভিন্ন কোন পথ খোলা নাই। ১৯৫২, ১৯৭১ এ দেশে যখন সংবিধান ছিল না। শাসকের মনগড়া আইনে বা ইচ্ছায় দেশ চলত। দেশের মালিক জনগণ তাই পথে নামলে শাসককে দেশের জনগণের কথা আমলে নিতে হতো। ১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল দেশ পরিচালনার শাসনতন্ত্র (পাকিস্তানের সংবিধান) প্রণয়নের নির্বাচন। ১৯৯০ এ দেশে শাসনতন্ত্র বা সংবিধান ছিল তবে সেই সংবিধান কে না মেনে স্বৈরাচার দখল করেছিল (১৯৭৫ -১৯৯০ পুর সময়টাকেই এক বাক্যে স্বৈরাচারের দখলদারিত্বের সময় বলা না গেলেও যুক্তি তথ্য দিয়ে স্বৈরাচারী শাসনামল বলা যায় কোন সন্দেহ ছাড়াই)। ১৯৯০ পরবর্তী বাংলাদেশের শাসক-গন যা করেছে, তার সব কিছুই করেছে সংবিধানকে ঘিরে। দীর্ঘ সময় ধরে যে শাসক তার শাসন ব্যবস্থা জারি রেখেছে সে শাসকের প্রথমবার ক্ষমতায় আসা টা সংবিধান সম্মত নয় – তা বলবার পথ খুব একটা খোলা যেমন নাই, ঠিক তেমন- ২য় ও ৩য় দফায় ক্ষমতা গ্রহণ সংবিধান সম্মত কি না তা বলবার অপেক্ষা রাখে না। ১৯৫২ – ১৯৭১ পর্যন্ত শাসকরা তাদের শাসন কাজ চালাত মূলত নির্বাহী আদেশে। বর্তমানে তার সাথে যুক্ত হয়েছে শাসনতন্ত্র / সংবিধান। যেহেতু আমাদের সংবিধানে শান্তি পূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টা উপেক্ষিত সেহেতু জোর করে ক্ষমতায় থাকাটা এক প্রকার বৈধতা পায়ই বৈকি।

১৯৫২ সালে জনগণ (মূলতই ছাত্র/ছাত্রী) রাষ্ট্র ভাষা বাংলা এর দাবীতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেছিল পরিকল্পনা করেই। সে সময় শাসকগণ জনগণের উপর গুলি চালাতে পেরেছিল তাদের তৈরি আইনের বলেই। শাসকরা পূর্বেই জানতে পেরেছিল জনগণ ১৪৪ ধারা ভাঙ্গবে। তারপরও তারা জনগণকে নিবৃত করতে পারে নাই। কারণ তাদের হাতে আইন ছিল না। বর্তমানে অবস্থাটা ভিন্ন – শাসকের হাতে আছে গণ বিরোধী ‘ডিজিটাল আইন’ ধারা’ ও ‘ক্রস ফায়ার আইন’ এ দু আইনই মুক্তিযুদ্ধ উত্তর স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান সম্মত (!) এবং জনগণের বিপক্ষে শাসকরা যখন খুশি যে ভাবেই খুশি তা প্রয়োগ করতে পারে। যে কারণে রাজপথে নামার বিষয়টা হয়ে ওঠে কিছুটা কঠিন। জনগণ যেন রাজপথ পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারে সে ব্যবস্থা শাসকরা করে রেখেছে তাদের জুলুমের শাসন জারি রাখতেই সংবিধান সম্মত ভাবেই। ভিন্ন ভিন্ন ভাবে জনগণ তার ন্যায্য অধিকারের কথা উচ্চারণ করবার সাথে সাথেই তাই ‘ডিজিটাল আইন’ ও ‘ক্রস ফায়ার আইন’ দিয়ে জনগণকে নাজেহাল করবার ব্যবস্থা করছে, করে যাচ্ছে। ‘ডিজিটাল আইন’ ও ‘ক্রস ফায়ার আইন’ দিয়ে যারা বন্দি হচ্ছে, গুম হচ্ছে বা খুন হচ্ছে তারা মূলত রাজপথের আন্দোলন সংঘটিত করার কাজটিই করছে। সে বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকবার কারণ নাই।

রাষ্ট্রভাষা বাংলা এর দাবীতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করবার স্পর্ধা দেখিয়েছিল কতজন? কতজনের বুকে শাসকরা গুলি চালিয়েছিল, সে হিসাব করলে কি দেখা যাবে? ঠিক তেমনই ঘটনা ঘটছে। শাসকরা তাদের ক্ষমতা অপব্যবহারের সীমাটা বাড়িয়েছে কতদূর পর্যন্ত, সে হিসাব না করলে গণ মিডিয়ার আন্দোলনকে রাজপথের আন্দোলন নয় বলে, ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করা যাবেই বৈকি। আর এই ব্যঙ্গ বিদ্রূপ শাসকের পক্ষেই যে যাবে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। গণ মাধ্যমের এই আন্দোলন গুলি সংঘবদ্ধ ভাবে না হয়ে – হচ্ছে বিচ্ছিন্ন ভাবে, একক ভাবে। রাজপথের আন্দোলনের মুল শক্তি সংঘবদ্ধতা যা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার আন্দোলন সংগ্রামে অনুপস্থিত।

পূর্ব পাকিস্তান থেকে শুরু করে বর্তমানের বাংলাদেশে সব সময়ই জনগণের সামনে তাদের শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে আলোক বর্তিকা হয়ে সামনে এসেছে শিক্ষার্থীগণ। তাদের সমর্থন দিয়েছে অনুসরণ করেছে জনগণ। তাদের হাত ধরেই রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করেছে রাজনৈতিক দল। বর্তমানের রাজনীতি শূন্য রাজনীতির নামে চর দখলের মাঠে যেন- সুস্থ রাজনীতি গড়ে না ওঠে, সে কারণে পাকিস্তানী স্বৈরচারী আইনের চেয়ে ভয়ঙ্কর স্বৈরাচারী আইন ‘৫৪ ধারা’, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ ও ‘ক্রস ফায়ার’ আইন বলবত রেখেছে গনপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশে। বাংলাদেশের জনগণকে নির্যাতন নিপীড়নের হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে – দেশ পরিচালনার শাসনতন্ত্র (সংবিধান) পরিবর্তন করা ভিন্ন কোন পথ কি আদৌ খোলা আছে?

আদীল
ঢাকা

2021-01-30 06:29:31

0000-00-00 00:00:00

Published
Categorized as 17

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *