স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও কেন আমরা ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইমপ্লিমেন্ট করতে পারলাম না? সবার মনে এই রকম প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক। ঢাকাতে এখন ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের যে অবস্থা তাতে ভবিষ্যতে ট্রাফিক জ্যাম যে ভয়াবহ হবে, সেটা বুঝতে রকেট সাইন্স পড়া লাগে না।
মেট্রো রেল, উরাল সড়ক, ৮ লেন রাস্তা, সার্কুলার রেল ইত্যাদি প্রজেক্ট সরকার যে ভাবে অগ্রাধিকার ভাবে নিচ্ছে। ভবিষ্যতে এগুলো বাস্তবে চলে আসবে। সেই তুলনায় সরকারের রোড ম্যানেজমেন্টের উপরে তেমন নজর নেই বলে ভুল হবে না। ৪ বছরের রাস্তা প্রজেক্ট ৮ বছর লাগছে , তবুও হবে। কিন্তু ট্রাফিক সিস্টেম রাস্তা বানানোর থেকে অনেক অনেক কঠিন কাজ। এটা মানুষের কালচার সাথে জড়িত। যা তৈরিতে অনেক সময় ও কন্টিনিউয়াস এফোর্ট লাগে। এখন থেকে যদি শুরু করা হয় তাহলে ৮-১০ বছর লাগবে মানুষের অভ্যাস পরিবর্তন করতে। এটা না করতে পারলে যখন উপরোক্ত প্রজেক্ট গুলি চালু হবে তখন ঢাকা হবে ভয়াবাহ যানজটের শহর।

এখন আসি লেখার শুরুর প্রশ্নের উত্তরে। মোটা দাগে নিচের কারণ গুলি দেশে ট্রাফিক সিস্টেম চালু না হবার কারণ বলে আমার মনে হয়েছে।
১) ভিআইপি: যারা সিস্টেম তৈরি ও ইমপ্লিমেন্টেশনের সাথে জড়িত তারা সবাই ভিআইপি। তারা জানে এই সিস্টেম ইমপ্লিমেন্ট হলে আমজনতার সাথে তাদেরও সিগন্যালে অপেক্ষা করতে হবে। এতে ভিআইপিদের ইজ্জত থাকে না। এখন যেমন ইচ্ছা তেমন ভাবে ঘণ্টার পর ঘন্টা রাস্তা বন্ধ করে রাখা, উল্টা পথে সাইরেন বাজিয়ে গাড়ি চালিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখানো যায়। ট্রাফিক সিস্টেম চালু হলে রাস্তায় কোন নুইসেন্স করা যাবে না। সুতরাং দরকার কি এইসব করে নিজের অসুবিধা তৈরি করার?
২) পুলিশের কাজ কমে যাবে: সিস্টেম চালু হলে একটা সময় পরে রাস্তার মোড়ে কোনো পুলিশের দরকার থাকবে না। এখন যেমন ৫ /৭ জন পুলিশ থাকা লাগে। তখন তাদের লাগবে না।
৩) বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষের আয় কমে যাবে: ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম না থাকায় রাস্তায় যার যেমন খুশি চলাচল করে ।মোড়ে মোড়ে পুলিশ রেজিস্ট্রার্ড যানবাহন কে আইন ভাঙার নামে মামলা করে। এই মামলার টাকার ৬০% সরকার ও পুলিশ ৪০% পায়। এতে তাদের ভালো ইনকাম হয়। আনরেজিস্ট্রার্ড ,অবৈধ ও ফিস্টনেস বিহীন যানবাহন থামিয়ে যার থেকে যেমন বা মাসিক চাঁদা নেওয়া থেকে বিশাল ইনকাম আসে। মোড়ে অবৈধ লেগুনা ও এই জাতীয় যানবাহনের জন্য স্ট্যান্ড তৈরি করে সেখান থেকে চাঁদা নেওয়া। অবশ্য এখানে রানিং সরকার দলীয় নেতা ও পতি নেতাদের সাথে ইনকাম ভাগাভাগি করতে হয়। অটোমেটেড সিস্টেম চালু হলে এইসব বন্ধ হয়ে যাবে।
৪) সরকার দলীয় শ্রমিক নেতা, মন্ত্রী, পরিবহন ব্যাবসায়ী: ট্রাফিক সিস্টেম চালু করলে ঢাকাতে যে পাবলিক যানবাহন চলে তার অধিকাংশ বাতিল হয়ে যাবে। কারণ এদের কোনো ফিটনেস বা মেয়াদ নেই। নতুন করে ইনভেস্ট করা লাগবে। এই পরিবহন গুলো কোনো না কোনো ভাবে ক্ষমতায় যারা থাকে তাদের সাথে জড়িত। সুতরাং টট আর চাইবে না ট্রাফিক সিস্টেম চালু হোক।
2022-04-09 16:36:52
2022-04-09 06:36:52