অস্ট্রেলিয়ায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমছে। সংক্রমণের মাত্রারেখা সমতল রয়েছে কয়েক দিন ধরেই। সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে দেশটিতে করোনা সংক্রমণের হার ব্যাখ্যাতীতভাবে কমছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
অস্ট্রেলিয়া সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের শনিবারের তথ্যমতে, সংক্রমণের হার প্রথম দিকে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ হলেও গত ১৫ দিনে এটা ১৫ শতাংশ থেকে এখন ১ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে এই প্রবণতা বজায় থাকবে কি না, তা এখনই বলা যায় না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশটিতে শনিবার পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্তের শনাক্তকরণ পরীক্ষা হয়েছে ৩ লাখ ৪৭ হাজার। এর মধ্যে আক্রান্ত প্রায় ২ শতাংশ। শনিবার পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা ৬ হাজার ২৯২। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবমতে, এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের। এক সপ্তাহ ধরেই প্রতিদিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা গড়ে ১০৬ জন।
শনিবার অস্ট্রেলিয়াজুড়ে নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ৮৯ জন এবং রাজধানী ক্যানবেরার রাজ্য অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরিতে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা শূন্য। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ১৪১ জন। যাঁরা মারা গেছেন তাঁরা বয়োজ্যেষ্ঠ এবং নারী–পুরুষ প্রায় সমান সমান। আর করোনা-আক্রান্ত রাজ্যগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বিখ্যাত শহর সিডনির রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলস শীর্ষে। দেশটির প্রায় অর্ধেক শনাক্ত ওই রাজ্যে, ২ হাজার ৮৬৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুনভাবে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ জন। আরেক বিখ্যাত শহর মেলবোর্নের রাজ্য ভিক্টোরিয়া রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে, আক্রান্ত ১ হাজার ২৬৫ জন। তৃতীয় স্থানে ব্রিসবেন শহরের রাজ্য কুইন্সল্যান্ড, শনাক্ত ৯৭৪। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় কোনো বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা যায়নি। এই ছিল ছোট আকারের আশাব্যঞ্জক অস্ট্রেলিয়ার পরিসংখ্যান।
স্পষ্টতই সংক্রমণ কমেছে এ কয়েক দিনে। ফলে দেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে দেওয়ার জল্পনা শুরু হয়েছে মানুষের মধ্যে। কিন্তু সরকার কঠোর। দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছুটি চলছে এখন, এই এপ্রিল মাসের ইস্টার উপলক্ষে। কিন্তু আইনের কোনো নড়চড় হয়নি। ইস্টারের লম্বা ছুটির আগে ছোট অপরাধে এক মন্ত্রীর পদ টেনে ধরে সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। সরকারের উচ্চ মহল থেকে বলা হচ্ছে, সংক্রমণ রোধ ভালো লক্ষণ, তবে এই সংখ্যাগুলো নেমে গেলেও আমরা এখনো জানি না, আমাদের নাগরিকদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কতটুকু বিকশিত হয়েছে এবং প্রতিষেধক আবিষ্কারের কী অবস্থা। এগুলো নিশ্চিত না হয়ে নিষেধাজ্ঞা সহজ করা যাবে না। জরুরি পরিকল্পনা অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়া সরকার বর্ধিত ব্যবস্থা গ্রহণ সমন্বিত করছে এবং কখন বন্ধ বা কমাতে হবে, তা নির্ধারণ করতে রাজ্য ও অঞ্চল সরকারগুলোর সঙ্গে একযোগে কাজ করছে ফেডারেল সরকার।
অস্ট্রেলিয়ায় এই প্রাদুর্ভাবের চিত্র পাল্টিয়েছে খুব দ্রুত। কয়েক সপ্তাহের সতর্কতা সত্ত্বেও হঠাৎ করে মধ্য মার্চে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে করোনাভাইরাসের হামাগুড়ি গড়তে থাকে দ্রুত। এর কয়েক দিন আগেও দেশটির রাজনীতিবিদেরা করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ভেবে নিশ্চিন্ত ছিল, এমনকি ১৩ মার্চ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে পরিণত হওয়ার আগের দিনও অস্ট্রেলিয়ানরা জানিয়েছিল, তাদের ১৪ মার্চ শনিবারের বিখ্যাত ফুটবল খেলা চলবে। কিন্তু চোখের পলকেই পাল্টাতে থাকে দৃশ্যপট। কয়েক দিনের ব্যবধানে জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা। দিশেহারা হয়ে পড়ে সরকার। ২০ মার্চ সব মানুষকে অবরুদ্ধ করে বন্ধ করে দেওয়া হয় সীমান্ত। এরপর ২৩ মার্চ হাজার হাজার ছোট–বড় ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল। সপ্তাহের মধ্যেই আরোপ করা হলো খুব প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে কেউ না বেরোনোর। পরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, দুজনের বেশি একত্র না হওয়া, আন্তরাষ্ট্র এবং রাজ্য সীমান্ত বন্ধ, এমনকি বিয়ে এবং দাফনেও আরোপ করা হয় সীমিত মানুষের উপস্থিতি; যার ফলে অস্ট্রেলিয়ার করোনা সংক্রমণের বৃদ্ধি টান ধরেছে এখন। কিন্তু এখনই এটার ভবিষ্যৎ বলা যাচ্ছে না। সে জন্য অস্ট্রেলিয়ায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমলেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ইঙ্গিত দিয়েছেন, কমপক্ষে আরও ছয় মাস বলবৎ রাখবেন এই নিষেধাজ্ঞা।