একটি জাতিকে ধ্বংসের চেষ্টার ক্ষুদ্রতম গল্প

“ঠক! ঠক!! ঠক!!! স্যার একটু বাহিরে আসুন, কথা আছে।” এটি একটি জাতিকে ধ্বংসের চেষ্টার ক্ষুদ্রতম গল্প। 
আজ ১৪-ই ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস! বাংলাদেশ জন্মের ঊষালগ্নে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আপন দেশের কিছু অমানুষের সহযোগিতায় তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বর্বরেরা আমাদের সেরা বুদ্ধিজীবিদের বাড়ি থেকে আপনজনদের কাছ থেকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। ৯৯১ জন শিক্ষাবিদকে এইভাবে ডেকে নিয়ে আজকের এই দিনে বিজয়ের প্রাক্কালে বাংলাদেশকে বুদ্ধিজীবীশূন্য করার ষড়যন্ত্র অনেকাংশই সফল হয়েছিল। বাকিটা আমরা বিজয়ের পরে সম্পন্ন করেছি। 
বুদ্ধিজীবী হত্যার উদ্যেশ্য ছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও দেশ হিসাবে আমরা যেন কোনদিন দাঁড়াতে না পারি। সেই ক্ষত এবং ক্ষতের কনসিকোয়েন্স আজো আমরা বয়ে বেড়াচ্ছি। বাংলাদেশের মাটি কেবল ফসলের জন্য উর্বর না। এই মাটি থেকে অনেক জ্ঞানীগুণী তৈরির জন্যও উর্বর। সমস্যা হলো সেই ব্রিটিশ শাসনামল থেকে শুরু করে আজও ব্রেইন ড্রেন চলছে। একটা দেশ কত গুণী মানুষ তৈরী করবে? এইতো গেল যারা বুদ্ধিজীবী হতে পেরেছেন তাদের কথা। কিন্তু এই বাংলাদেশে সুপ্ত প্রতিভারদর মানুষ যারা একসময় বুদ্ধিজীবী হতে পারতো তাদের পোটেনশিয়াল হত্যা কি বুদ্ধিজীবী হত্যার সামিল নয়?
আমিতো আজও সুপ্ত বুদ্ধিজীবীদের গণহত্যা দেখি। আমাদের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মানহীন বানিয়ে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীদের প্রতিভার যে মরণ ঘটছে তা কি আমরা লক্ষ করছি? সেইটা রোধে কি কোন ব্যবস্থা নিচ্ছি? শিশুদের স্কুল কেমন হওয়া উচিত? স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কেমন হওয়া উচিত ছিল? তাদের বেতন কেমন হওয়া উচিত ছিল? কল্পনা করা যায় আমাদের ছোট ছোট সোনামনিদের পড়ানোর জন্য প্রাথমিক স্কুলে যাদের নিয়োগ দেই সেই শিক্ষকরা সরকারের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী। এইটা আমি যতবার ভাবি ততবার দুঃখে কষ্টে মনটা কেঁদে উঠে। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। 
সেই ১৯৪৭ এর পর থেকে যেই ব্রেন ড্রেন শুরু সেটা কি আজও আমরা রোধ করতে পেরেছি? তাহলে বুদ্ধিজীবী তৈরী হবে কোথা থেকে? হাজার হাজার মেধাবী ছেলেমেয়ে ইউরোপ আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষার্থী যাচ্ছে। তাদের ফিরিয়ে আনার কোন পরিকল্পনা কি সরকারের আছে? অতীতের কোন সরকারের ছিল? ভাবটা এমন যেন যারা যাচ্ছে তারা না আসলেই আমাদের লাভ। যারা বাবা মাকে দেখাশোনা করতে কিংবা অন্যকোন কারণে ফিরে আসেও তারা চাকুরী পায় না। যেন উচ্চ শিক্ষা শেষে দেশে ফিরে অন্যায় করে ফেলেছে। বর্তমান বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী নাই। অনেককেই বুদ্ধিজীবী বানিয়ে তাদেরকে দিয়ে অভিনয় করানো হয়। প্রকৃত অর্থে বুদ্ধিজীবী নাই। আর নাই বলেই দেশে এত অনাচার, অবিচার, ঘুষ, দুর্নীতি, পাচার বিরামহীনভাবে চলছে।
অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

2021-12-14 04:23:58

2021-12-13 17:23:58

Published
Categorized as 54

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *