পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ব্যাংক ঋণে সুদের হার স্থগিত থাকায় সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহকে ২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ ঋণগ্রহীতা সরাসরি সুবিধা ভোগ করবে।
রোববার (৩১ মে) সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা শেষে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু দুই মাস সবকিছু বন্ধ ছিল। ব্যবসা, বাণিজ্য, চলাফেরা সবকিছু বন্ধ ছিল এখন তা আস্তে আস্তে কিছুটা উন্মুক্ত করে দিচ্ছি। অনেকে ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছিল তারা দুশ্চিন্তায় ছিল ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ থাকায় ঋণের সুদ নিয়ে।
তিনি বলেন, আমরা কিছু কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। ইতিমধ্যে আমরা প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার উপরে প্রণোদনা দিচ্ছি। যা জিডিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। কৃষকদের আলাদা ব্যবস্থা নিয়েছি সেখানে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি। ক্ষুদ্র, মাঝারি, বৃহৎ শিল্পের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নিয়েছি। এভাবে সর্বস্তরের মানুষের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ঋণ নিয়েছে তাদের জন্য সুদ টানার প্রয়োজন হবে না। সেখানে কিছু সুযোগ সুবিধা আমরা দেব। এরইমধ্যে ১৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি। আর একটি নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ যুক্ত হচ্ছে। মোট ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ। দুই মাস বন্ধ থাকায় ব্যাংক থেকে নেওয়া লোনের উপর সুদ হয়েছিল ১৬ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা। সেখানে আমরা দুই হাজার কোটি টাকা দিচ্ছি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। যেটা ঋণগ্রহীতাদের আর আনুপাতিক হারে সুদ দিতে হবে না। সুদের অবশিষ্ট অর্থ ১২ মাসের কিস্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকে পরিশোধ করবে। এতে এক কোটি ৩৮ লাখ ঋণগ্রহীতা সরাসরি উপকৃত হবেন। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত প্রণোদনা প্যাকেজের পরিমাণ দাঁড়াল ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি বা ১২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ, যা জিডিপি ৩.৭ শতাংশ।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধিগুলো সকলকে মানতে হবে। আমরা জানি দীর্ঘদিন সবকিছু বন্ধ ছিল, কিন্তু এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। আমরা দেখতে পাচ্ছি অন্য দেশগুলো ধীরে ধীরে তাদের অর্থনীতির ক্ষেত্র যাতায়াত সবকিছু উন্মুক্ত করছে, আমরা সেই পদ্ধতিতে যাচ্ছি। শুরু থেকে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছিলাম যে কারণে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার বা সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। কিন্তু আমরা উন্মুক্ত করছি, সেখানে হয়তো একটু আশঙ্কা থেকে যেতে পারে। সকলে যদি স্বাস্থ্যবিধিটা যথাযথভাবে মেনে চলেন। এটা শুধু নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে না, নিজের পরিবারকে পাড়া প্রতিবেশীকে সুরক্ষিত রাখবে।
তিনি বলেন, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হবে আমাদের। মানুষের আয় উপার্জনের পথ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। সীমিত আয়ের মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে, নিম্ন আয়ের লোক প্রত্যেকের কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। এই কষ্টের হাত থেকে সকলকে মুক্তি দিতে চাই। অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। যদিও বাজেটের ওপর চাপ পড়বে। আগামী ১১ জুন বাজেট ঘোষণা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে যেহেতু অর্থনীতিতে একটা বিরাট ধাক্কা আসছে দেখতে পাচ্ছি। তার মধ্য দিয়ে আমাদের চলতে হবে। চলতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। শিক্ষা ক্ষেত্রে যে সুবিধাগুলো দিতাম সেগুলো বন্ধ হবে না, অব্যাহত থাকবে। প্রাইমারি থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি-উপবৃত্তি সেটা অব্যাহত থাকবে। অর্থনীতি যতই ক্ষতিগ্রস্ত হোক না কেন আমাদের ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে সহযোগিতা অব্যাহত রাখব। বিনামূল্যে বই বিতরণ অব্যাহত থাকবে। শিক্ষা উপকরণ বিতরণ অব্যাহত রাখব।