গত দিন উদযাপন করলাম সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণ। আজ উদযাপন করি কন্যা দিবস। কন্যা দিবসে আমরা যারা নিজেদের দেয়ালে কন্যাদের জন্য শুভ কামনা করছি, তারা সবাই রাজপথে নেমে ধর্ষণের প্রতিবাদ করলে হয়তো আমাদের কন্যারা নিরাপদ থাকতো। আসলেই কি আমরা আমাদের কন্যাদের জন্য নিরাপদ দেশ গড়ছি নাকি প্রত্যাশা করছি তাদের নিরাপদ জীবন?
২৭.০৯.২০২০ ছিল ভারতের কন্যা দিবস। হয়তো ভারতের বাংলা ভাষাভাষী কারো পোষ্ট দেখে ধরে নিয়েছি আজ আমাদের দেশেও কন্যা দিবস। যদিও এই দিবসটি বাংলাদেশ পালন করে ৩০ সেপ্টেম্বর। অথবা এমনও হতে পারে কেউ না কেউ উদ্দেশ্য মূলক ভাবেই এই দিনটির কথা স্মরণ করে দিয়েছে ফেসবুকে।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের খবরে বেশ বিষদ ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে ঠিক কি ভাবে ধরা পড়ল এমসি কলেজের দুই ধর্ষক সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্কর। ঠিক যেন গোয়েন্দা সিরিজের সেই মাসুদ রানা। বাংলাদেশ পুলিশ। ঠিক কখন কোথায় ওরা যাবে, খাবে, হিসু করবে তা ছিল পুলিশের নখ দর্পণে। নিশ্চয় তা থাকবার কথা। প্রতিটি মানুষ চলে তার একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির ভেতরে। এই গণ্ডি কারো ছোট বা বড় তবে, অপরিচিত নয়। ঢাকায় থাকি মানে যে সমগ্র ঢাকায় থাকি তা নয়। প্রতিটি মানুষ কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় তার চলাচল নিশ্চিত করে। কখনও ছোট কখনও বড় এই চলাচলের বৃত্ত। সুতরাং এই আসামীরা কোন পথে কোথায় কোন দিকে পালাতে পারে সে পুলিশের জানবার কথা।
কিন্তু আপসোস এমসি কলেজের সেই অগ্নি কান্ডের ঘটনায় কারা জড়িত ছিল তা জানত না পুলিশ, এমনকি সেই ঘটনায় জড়িতরা কে কোথায় তাও জানে না পুলিশ! ঠিক যেমন জানতোনা কারা এমসি কলেজের পুড়ে যাওয়া হোস্টেল, হোস্টেল সুপার এর বাড়ি দখল করে থাকে। জানবে কি করে! কলেজ কর্তৃপক্ষ জানাই নাই তাদের। তবে তো স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে – সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্কর এর গতি বিধির হদিস পুলিশ পেলেন কি করে? পুলিশ কি তাদের সাথে সাথেই ছিলেন? এবং মাসুদ রানা স্টাইলে নদী পার হয়ে ভারত সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান থেকে খপ করে ধরে ফেললেন একজনকে আর অন্য জনকে ধরে ফেললেন সীমান্তের কাছে লুকিয়ে থাকা ডেরা থেকে?
পাহাড়ের সেই ধর্ষকগণের বিরুদ্ধে আর ধর্ষণ মামলা ছিল সে জানা গেল ধর্ষকরা ধরা পরবার পর পত্রিকা মাধ্যমে। তাহলে ধর্ষণ মামলার থাকবার পরও ধর্ষক ধরা পরে নাই কেন পুলিশের হাতে? কি কারণই বা কাজ করে এই ধরা না পরার পেছনে। ফেসবুকে মিডিয়ায় ভাইরাল হবার পর সেই পুলিশই আবার আসামীকে ধরে ফেলে কি করে !
খুব সাধারণ কিছু জিজ্ঞাসা; করে ফেলতে পারে বিব্রত, বিধ্বস্ত। তেড়েফুঁড়ে আসতে পারে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। সরকারি কর্মচারীর দায় মোচনের জন্য আইন তৈরি আছে। আসলে এই দায় মোচন কি সরকারী কর্মচারীর? নাকি অন্য কারও? সরকারি কর্মচারী চলে কার হুকুমে? কে সেই হুকুম দাতা?
মতিয়ায় চৌধুরী কে রাস্তায় ফেলে মেরেছিল পুলিশ যার হুকুমে, তাকেই আবার সেই পুলিশই মারছে মতিয়া চৌধুরীদের নির্দেশে। দিন শেষে দায়ী পুলিশ!
এমসি কলেজের সন্ধ্যার ঘটনা যদি রাতের ভেতর চারিদিকে ছড়িয়ে না পড়ত তবে? কে ছড়াল এই খবর? মিডিয়া, ফেসবুক? ফেসবুকে সেই হল পুড়ে যাবার ঘটনাও আছে? হোস্টেল পোড়ানোর ঘটনায় সকলকে ছাড় দেয়া গেলেও এখন আর ছাড় দিবার কোনই উপায় নাই; কারণ সেই দুঃসময়ের সাথে তুলনা করছে মানুষ ঘটনাটি। এমন লোমহর্ষক ঘটনা সেই ১৯৭২-৭৫ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনার সাথে মিলে যায় হুবহু। ১৯৭২-৭৫ সালে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মজাম্মেল হক ও তার গ্যাং মেরে ফেলেছিল গাড়ি চালক ও ধর্ষিতার স্বামীকে। ধর্ষিতার লাশ মিলেছিল তিনদিন পর টঙ্গী ব্রিজের নীচে।
মেজর নাসেরের হাতে মোজাম্মেল ধরা পড়ার পর মোজাম্মেল বলল, ঝামেলা না করে আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আপনাকে তিন লাখ টাকা দেব। বিষয়টা সরকারি পর্যায়ে নেবেন না। স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমি ছাড়া পাব, আপনি পড়বেন বিপদে। আমি তুচ্ছ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকে জড়াতে চাই না। অবশ্য মুক্ত হয়ে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মজাম্মেল হক মেজর নাসের কে কাঁঠাল খাবার দাওয়াত দিয়েছিল। তথ্য সুত্রঃ দেয়াল – হুমায়ুন আহমেদ।
এখন ক্ষমতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা। সাথে সাথে খবরটি ফেসবুকের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে যাওয়াতে এবং দ্রুত পুলিশের উপস্থিতির কারণে হয়তো লাশ না হয়ে হয়েছে জিন্দা লাশ ধর্ষিতা ও তার স্বামী।
১৯৭৩সালে ফেসবুক ছিল না। ছিল মিডিয়া। তবে ফেসবুক খুব দ্রুত খবর ছড়াচ্ছে মানুষের ভেতর সুতরাং ফেসবুকের রিচ কমিয়ে দাও জব্বার সাহেব সেই কাজটিই করছেন, করাচ্ছেন। দ্রুত পুলিশ হাজির হবার সাথে সাথে কি করে ফেসবুকে চলে আসে ঘটনা? তবে কি পুলিশ চেয়েছিল ফেসবুকে প্রচারিত হোক ঘটনাটি? সিলেটের পুলিশে কি মেজর নাসেরের মত মানুষ এখনও আছে যে কিনা ১৯৭৩ সালে তিন লক্ষ টাকা প্লাস বঙ্গবন্ধুর কাছের লোক জেনেও আইনের আওতায় নিয়েছিল দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মজাম্মেল হককে? নাকি সিলেটের পুলিশ জেনে গেছেই ইতোমধ্যে তাদের অত্যাচারের আঁচ তাদের গায়েও। তাদের কাঁঠাল মুখে না খাওয়ালেও ভরতে দ্বিধা করবে না এই সন্ত্রাসীরা?
ধন্যবাদ তথ্য প্রযুক্তির হোতা আপনাকে। আপনি যে হাতিয়ার তৈরি করে যাচ্ছেন জনগণের বিপক্ষে, সেই হাতিয়ার ব্যবহার হবে আপনার বিপক্ষেই। কোন না কোন দিন আপনি এসে দাঁড়াবেন জনগণের কাতারে। ঠিক আজকে যেমন গুম, খুন ও হত্যা করছেন বিএনপির তৈরি করা অবৈধ ক্রসফায়ার আইনে, বেধড়ক পিটিয়ে সিকে ভরছেন বিরোধী মতকে। ঠিক একই কায়দা অন্যে ব্যবহার করবে না আপনার বিপক্ষে তা ভাববার কোনই কারণ কি আদৌ আছে? বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি প্রতিহিংসার রাজনীতি। বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি জনগণকে দমন, পীড়ন এবং শোষণের রাজনীতি।
আদেল
ঢাকা – ২৮.০৯.২০২০
2021-01-30 06:29:31
0000-00-00 00:00:00