২০২০ সালের ঈদুল আযহার আমেজটা শুধুমাত্র করোনার জন্যই ব্যতিক্রম হয়নি না, আমরাতো আরও বহু অন্যায়ের দর্শক, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘটে যাওয়া বহু অন্যায় দেখেছি। সবার অলক্ষ্যে বাংলাদেশের সমাজে একটা জিনিস ঘটে যাচ্ছে সেটা হয়তো কেউ খেয়াল করছেন কি না জানি না।
মানুষ এখন দলে দলে ওয়াজ মাহফিলে বেশী বেশী যোগ দিচ্ছে, রাজনীতিবিদরা এখন ফেসবুকে বেশী বেশী ধর্মীয় পোষ্ট দিচ্ছে। সাধারণ জনগণ দেখছে দেশে বিরোধীদল নেই, কিভাবে বিরোধীদলকে ধ্বংস করা হয়েছে, রাজনীতি-ইলেকশন নেই, প্রতিবাদ করার কেউ নেই। মানুষ এখন এইগুলো নিয়ে আর মাথা ঘামায় না তাছাড়া মাথার উপর বসিয়ে রাখা হয়েছে ৫৭ ধারাকে।
অবশিষ্ট সাংবাদিকরাও দু’চার কলম লিখলে রেহাই মিলছে না, মেধাবীরা একটু সুযোগ পেলেই দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। গ্রাম বাংলার মানুষ আগে নানান রাজনীতি দলের মিটিং ক্যামপেইন নিয়ে ব্যস্ত থাকতো, যেকোন নির্বাচনের বছর খানেক আগেই তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতো এখন সেই গণতন্ত্র চলে যাচ্ছে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে।
আমাদের পূর্বপ্রজন্মরা ব্রিটিশ-পাকিস্তানী সময়ে যে অধিকারের জন্যে রক্তপ্রাণ সঁপে দিয়েছিল, সেই একই অধিকার অর্জনের জন্য বর্তমান প্রজন্মকেও একই শর্তে সংগ্রাম জারি রাখতে হচ্ছে। সরকারের সমালোচনা করার জন্য গ্রেফতার হচ্ছে, সত্য তুলে ধরার জন্য ৫৭ ধারায় সাংবাদিক গ্রেফতার হচ্ছে, প্রতিবাদীরা গুম হয়ে যাচ্ছে। শব্দগতভাবে সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ বলেও ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষমতা যাচ্ছেতাই উপায়ে চেপে বসা সরকারগুলোর হাতে রাখা হয়েছে।
সদ্যপ্রাপ্ত ঘটনার একটি সাক্ষী, পাপিয়া ইস্যুতে পাপিয়ার সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার ফটো পােষ্ট করেছিলেন সাংবাদিক কাজল। যার ফলশ্রুতিতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর গত ৯ মার্চ রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেছিলেন। এর পরদিন ১০ মার্চ নিখোঁজ হয়েছিলেন সাংবাদিক কাজল। এর তিন ঘণ্টার মাথায় ওই দিন রাত ১০ টা ১০ মিনিটে কাজলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দ্বিতীয় মামলা করেছিলেন আওয়ামী লীগেরই আরেক সদস্য উসমিন আরা বেলি। এর পর থেকেই তিনি নিখোঁজ হন, পরিবারের সদস্যদের দাবী ছিল পরিবারের পক্ষ থেকে কোন মামলা থানা নেয়নি। সংসদ সদস্যরা বাদী হয়ে মামলা করলে সেই মামলার বিরুদ্ধে কথা বলার সাধ্য কার?
যদি এই তন্ত্র ভাংতে না পারেন আগামীতে এই সমাজ দু’শ্রেনীতে ভাগ হবে – মালিক আর দাস, মালিকের ইচ্ছায় দাসরা মুখ বন্দ করে ! মুক্তিযুদ্ধ করে মুক্ত হবার বিপরীতে এঁদেশের মুক্তিকামী মানুষকে প্রজায় পরিণত করা হয়েছে। অথচ আমাদের রক্তিম স্বাধীনতার ইতিহাসকে জীবনের সর্বোচ্চ বিশ্বাস আর শ্রদ্ধা করে আসছি জীবনের শুরু থেকেই। একের পর এক ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে রাষ্ট্রের নাগরিকদের এর চেয়ে পরাধীনতা আর কিবা হতে পারে?
কারণে-অকারণে একের পর এক সাংবাদিক-নাগরিকদের বিনা কারনে গ্রেফতার, গুম আর বিরোধীদলকে মাঠশূন্যই মূলত ক্ষতবিক্ষত করেছে দেশের মূল স্বাধীনতাকে। কবে মুক্তি পাবে এই তন্ত্র থেকে বাংলাদেশ! এ কেমন দুই দুইবার রক্তের বিনিময়ের স্বাধীনতা! এ কেমন তার সংবিধান!
2021-09-01 04:56:56
2021-08-31 18:56:56