গত ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনা ভাইরাস প্রথম সনাক্ত হবার পর থেকে এখন পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে প্রায় ২ কোটি লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, এতে প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছেন। মহামারি করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত হয়েছে অর্থনীতি এর সাথে পাল্লা দিয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে সমাজ ব্যবস্থা, মানবজীবন। করোনা নিয়ে উদ্বিগ্ন সবাই, বিশ্বজুড়ে চলছে অর্থনীতি সক্রিয় রাখার এক ব্যর্থ প্রয়াস।
করোনা ভাইরাসে সন্ত্রস্ত রাষ্ট্রনায়কেরা স্বাস্থ্যব্যাবস্থা সক্রিয় রাখার প্রয়াসে দিয়েছেন লকডাউন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চলছে লকডাউন, কারফিউ, কঠিন নিয়ম-কানুন আর জরিমানার প্রয়োগ। মানবজীবনের নানা প্রথা পাল্টে গেছে, ঘরবন্দি মানুষের গুরুত্বপূর্ণ মানবীয় আচরণ পাল্টে যাচ্ছে। প্রকৃতির সাথে মানুষের বৈরী আচরণ কমে আসলেও বাড়ছে পারিবারের কাছের মানুষগুলোর সাথে কলহ। সম্প্রতি জাতিসংঘ “ছায়া মহামারি” নাম চিহ্নিত করেছেন ঘরবন্দি মানুষের এই আচরণ।
করোনা ভাইরাসের বিস্তার এবং সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিক বিপর্যয় তৈরী করেছে অনিশ্চয়তা, দুশ্চিন্তা আর উদ্বেগের। পত্রপত্রিকা, টিভি, সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রতিনিয়ত প্রচার হচ্ছে করোনা ভাইরাস নিয়ে নানা রকমের খবর। চারপাশে প্রচারিত এসব খবর আর তার উপর্যুপরি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করার কারণে ঘরবন্দি মানুষের মাঝে তৈরী হয়েছে অনিশ্চয়তা সহ্য করতে পারার অক্ষমতা। দুশ্চিন্তা-উদ্বেগের চাপে ভেঙে পড়ছে মানসিক স্বাস্থ্য।
বর্তমান পৃথিবীর সর্বত্র চলছে ফটোগ্রাফির চর্চার অবাধ বিচরণ। সবার হাতেই রয়েছে মোবাইল। মোবাইল ফোনে উন্নত মানের ক্যামেরা যোগ হওয়ায় অনেকেই হয়ে পড়েছেন মোবাইল ফটোগ্রাফি নির্ভর। যদিও প্রফেশনাল কাজে মোবাইল ফটোগ্রাফির ব্যবহার খুবই কম। মোবাইল ফোন ফটোগ্রাফির চর্চার আরেএকটি সুবিধা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করার সুবিধা বিশেষ করে ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুকে। অনলাইনে লাইক, কমেন্ট অথবা কোনো গ্রুপে শেয়ার কিংবা হ্যাশট্যাগ দিয়ে বন্ধুদের চ্যালেঞ্জে করা অনেকের কাছে নেশার মতো।
করোনাকালে অনলাইন-ফটোগ্রাফি চর্চা নিয়ে বেশ কিছু লেখা লিখি হয়েছে। বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে কিছু গ্রূপে অনলাইন লাইভ টকশো আয়োজন করেছে, কিছু গ্রূপে লাইভ সেশন কিংবা ফটো আড্ডা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একে ফটোগ্রফাহের নতুন কিছু শিখতে পড়েছেন, নতুন বন্ধু জুটিয়েছেন এবং খানিকটা হলেও স্বল্প সময়ের জন্য দিয়েছেন স্বস্তি, জুগিয়েছে শক্তি এবং অনুপ্রেরণা।
অ্যাপারচার ফটোগ্রাফি গ্রূপ বাংলাদেশের ফটোগ্রাফারদের বিদেশী ফটোগ্রাফের সাথে একসাথে একই প্লাটফর্মে ছবি শেয়ার করে একে ওপরেই কাছ থেকে শেখার সুযোগ তৈরির বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন গত ২ বছর ধরে। করোনার এই দুর্বিষহ সময়ে অ্যাপারচার ফটোগ্রাফি গ্রূপ বাতিকক্রমধর্মী সাপ্তাহিক ফটোগ্রাফি চ্যালেঞ্জে আয়োজন করছেন ধারাবাহিকভাবেই। অ্যাপারচার ফটোগ্রাফি চ্যালেঞ্জে ৩টি ক্যাটেগরি ছবি উপস্থাপন করা যায় ক) ডিএসএলআর খ) মোবাইল এবং গ) নবীনদের জন্য অনুর্ধ ২১। গতসপ্তাহের ফটোগ্রাফি চ্যালেঞ্জে বিষয় ছিল সাদা কালো ছবি।
অ্যাপারচার ফটোগ্রাফি গ্রূপে বর্তমানে প্রায় ৩,০০০ সদস্য রয়েছে। এখানে বাংলাদেশী ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য সহ অন্যন্য ৬৬টি দেশের ফটোগ্রাফার রয়েছেন। প্রতিদিন আরও সদস্য বাড়ছে সাথে বাড়ছে ছবি ও ছবিবিষয়ক বিভিন্ন লেখালেখি এমন কি আলোচনার পরিধি। এটি একটি আন্তর্জাতিক প্লাটফর্ম হিসেবেই কাজ করছে ফটোগ্রাফারদের নিয়ে।
করোনাকালে অনলাইন-ফটোগ্রাফি চর্চার বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে অ্যাপারচার ফটোগ্রাফি গ্রূপের নাম। করোনা পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে তখন অ্যাপারচার ফটোগ্রাফি গ্রূপে সাপ্তাহিক ফটোগ্রাফি চ্যালেঞ্জে কার্যকম চালিয়ে যাবে। পরিকল্পনা রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন আলোকচিত্রির সাথে সদস্যদের নিয়মিত অনলাইন আলোচনা-ওয়ার্কশপ আয়োজন এবং গ্রূপের অ্যাডমিনগণ এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও পরিকল্পনার মাঝে রয়েছে এক্সিবিশন এবং আলোকচিত্র নিয়ে ছবির বই প্রকাশনা। অ্যাপারচার ফটোগ্রাফি গ্রূপের এ সপ্তাহের ফটোগ্রাফি চ্যালেঞ্জের বিষয় হচ্ছে “ফুল”। বিস্তারিত জানতে নিচের উল্লেখিত প্রচারপত্রে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন অথবা অ্যাপারচার ফটোগ্রাফি গ্রূপের ফেইসবুক পেজ ঘুরে আসতে পারেন।
লেখক পরিচিতি
সালাহউদ্দিন আহমদ
সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার, ভিক্টোরিয়ান ফরেস্ট মনিটরিং প্রোগ্রাম
আলোকচিত্র শিল্পী
তারিখ: মেলবোর্ন, অগাস্ট ২০২০
2021-05-04 20:09:36
0000-00-00 00:00:00