অসৎ আর খারাপ মানুষ গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিলে ভালো কোন ফল আসবে না

আমি নিশ্চিত গত ৩০ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে যত ছাত্র পাশ করেছে তাদের ভোটে যদি বিভাগের সেরা শিক্ষকের নির্বাচনের ব্যবস্থা হয় তাহলে প্রতিবছর খোরশেদ কবীর স্যারই হতেন বিভাগের সেরা শিক্ষক। এইরকম একজন লিজেন্ডারি শিক্ষককে আমরা কি ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে তাকে সঠিকভাবে ব্যবহার ও মূল্যায়ন করতে পেরেছি? অবসরের পরপরই বিভাগ তাকে পর করে দেয় যেন আপদ গেছে। স্যারকে প্রথম বর্ষ অথবা কোয়ান্টাম মেকানিক্স কিংবা অন্য যেকোন একটি কোর্স দেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেও বিভাগের একাডেমিক কমিটিকে রাজি করাতে পারিনি। এইসবের মুলে রাজনীতি আর ভেস্টেড গ্রূপের দলাদলি।

এইজন্যই আমি বিশ্বাস করি যেই দেশে অসৎ আর খারাপ মানুষ বেশি সেখানে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো কোন ফল আসবে না। কারণ খারাপ মানুষগুলো কমন ইন্টারেস্টে এক হয়ে সকল ভালো প্রস্তাবগুলোকে নাকচ করে দেয়। ভালো খারাপ সকল ভোটের মূল্যতো একই। এই জন্যই বিশ্বের প্রায় সকল ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চেয়ারম্যান সিস্টেমের পরিবর্তে বিভাগীয় প্রধান ব্যবস্থা চালু। একজন ভালো শিক্ষক ও গবেষককে ওই দায়িত্ব দিলে সে তখন এককভাবে বিভাগের জন্য যা মঙ্গল তা করে সেটা মাথাগুনে সিদ্ধান্ত চেয়ে বেটার বলেই তারা বিভাগীয় প্রধান ব্যবস্থা রেখেছে। এখানে সিনিয়র মোস্টকে তিন বছর মেয়াদে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়। মান না গুনে কেবল এই বয়সগুনে পদ দেওয়ার পক্ষে আমি কখনো না।

একাধিকবার ভিসি প্যানেলে থেকেও অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হতে না পারায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যেমন একটি কালো দাগ তেমনি আমাদের কবীর স্যার এখন পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সিলেকশন বোর্ডের সদস্য হতে পারেননি এটা একটি কালো দাগ। আমি ভেবে পাই না স্যার থাকতে বিভাগের অন্যরা স্যারকে রেখে সদস্য হতে রাজি হয় কিভাবে? মানে লজ্জা লাগে না? খোরশেদ কবীর স্যারদের মত শিক্ষকদের যদি সিলেকশন বোর্ডে রাখা হতো তাহলে শিক্ষক নিয়োগে এত ছন্দাই নন্দাই কেউ করতে পারতো না। আসলে এটাই আমাদের কাল। নিজে যা ডিজার্ভ করি তার চেয়ে বড় পদ নিতে আমাদের লজ্জা লাগে না। তেমনি নিজের চেয়ে ভালো কাউকে তাকে রেখে নিজেই বড় পদে যেতেও আমাদের লজ্জা লাগে না। লজ্জা লাগবে কিভাবে সেই পদ পাওয়ার জন্য দেনদরবার করতেও লজ্জা লাগে না।

কামরুল হাসান মামুন

প্রফেসর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

2021-05-04 16:20:37

2021-05-04 23:20:37

Published
Categorized as 54

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *