অভিমানি প্রকৃতি! নতুন সূর্য্যর অপেক্ষা………

একি চারদিকে নিস্তব্ধ ,সুর্যটা যেন মুখ গোমরা করে আছে।আজ যেন হাসছে না।
জানি ‘অদ্ভুত এক আঁধার এসেছে পৃথিবীতে’ আজ। কেউ জানে না কবে মিলবে মুক্তি। কিন্তু আমরা অধীর আগ্রহে সবাই ফিরতে চাই আমাদের পুরনো জীবনে। যে জীবনে আমরা অকারণে হেসে উঠবো, রাস্তায় যেতে যেতে কাছের মানুষদেরকে হঠাৎ দেখে দৌড়ে গিয়ে হাত ধরে বলবো, কতদিন দেখা হয়নি!! পথের পাশে পরিচিত আমাদের দেখে হেসে উঠে বলবে, ‘আপা, কতদিন দেখা হল। মোবাইলের স্ক্রিনে বন্ধুর নাম ভেসে উঠবে সপ্তাহান্তে ক্যাফেতে। বদলে যাওয়া আকাশের রং আর পাখিদের ওড়াউড়ি দেখতে দেখতে আমরা আবার ভাববো, ‘‘আমারে তুমি অশেষ করেছো, এমনই বীণা তব…”।

একটি একক পরিবারে সন্তান লালন-পালন করে দু’জন মিলে চাকুরি করার সবরকম যুদ্ধ ও বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করেই আমরা আরেকটি নতুন কর্মমুখর সকালের অপেক্ষায় থাকতাম। সে কি ব্যস্হ দু ছেলেকে স্কুলের জন্য রেডী করা স্কুলে নামানো ঠিক সময়ে job . Ohh my god .
দিনশেষে যখন ছেলেদের সাথে কত কথা। কিন্তু মা-ছেলের সারাদিনে জমে থাকা কথা যেন শেষ হত না।

ঘরবন্দী দিনযাপন যতবেশি দীর্ঘায়িত হচ্ছে নানান চিন্তার গভীরতা ততোই ডালপালা মেলছে। শুরুতে এই ‘বন্দীত্ব’ অবস্থা যতটা সহজ মনে হয়েছিল সময় যত গড়াচ্ছে ততোই মনে হচ্ছে সহজ কিছু সহজ নয় আসলে। আমাদের বৈচিত্র্যহীন ন’টা-পাঁচটা জীবন, প্রাত্যহিক যানজট, জীবিকার প্রয়োজনে উত্তর-দক্ষিণে ছুটে বেড়ানো আর কর্মক্লান্ত দিনশেষে ঘরে ফেরা মূলতঃ এই ছিল কোভিড-১৯ শুরুর আগে পরিচিত নগরীতে আমাদের দিনলিপি। অনেক ভোরে ঘুম থেকে উটা শীতের দিন সকালের মৃধু আবহাওয়ায় দোল খাওয়া আর সচ্ছ কুয়াশায় রৌদের চুম্বন মাখা মিষ্টি হাসি দিয়ে ঘাস গুলো যেন অপেক্ষায়। রবীন্দ্রনাথের গান চালিয়ে আবার শুরু হতো সময়ের সাথে পাল্লা দেবার পালা।

প্রতি সপ্তাহে অধীর আগ্রহে শনিবার রবিবার অপেক্ষায় থাকতাম।কারন Australia public holiday Saturday & sunday. আর সেভাবে job Monday to Friday. আর Friday বিকেল যেন পুনরায় জীবনের মানে খুঁজে পাওয়া ।jobথেকে বের হয়ে অনেকটা পথ হেঁটে ফিরতাম। হাঁটতে হাঁটতে একটা বড় মাঠ পেরুতাম। মাঠের কিছুটা দূরে ঘাসফড়িংদের ওড়াউড়ি চলতো, ছেলেরা ব্যস্ত থাকতো ক্রিকেট খেলায়। মাঠের কোনায় নতুন নতুনগাছে ফুল ফুটতো। কোন একসময় গাছটা পুরোপুরি অদ্ভুত রঙে ছেয়ে যেত। প্রতিবছর প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে গাছ গুলোও যেন সাজিয়ে নেয় তাদের। আর নিজের সৌন্দর্য আর মিষ্টি গন্ধ দিয়ে সবাইকে আহবান করাতে কিযে আনন্দ উপভোগ করতো। আর আমরাও এই সময়টার অপেক্ষায় থাকতাম।

কবে সেই রঙীন দিনটি আসবে সেই অপেক্ষায় , অনেক অভিমানী প্রকৃতিকে আলতো করে রাগ ভাঙাবে। নতুন সুয্যের ঊস্ন রৌদের চাদর রে ঠেকে দিবে তাকে আর সে মনের মাধবী মিশিয়ে আমাদের হাত ছানি দিয়ে ডাকবে। সেই অপেক্ষা………

দিলারা জাহান
লেখিকা

2021-03-07 15:43:57

2021-03-07 04:43:57

Published
Categorized as 52

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *